ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বাগেরহাটে ফাতেমা ধানের বাম্পার ফলন 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:১৮, ১২ মে ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকা দরে। অবশ্য সব ধান নয়, এ হচ্ছে ফাতেমা জাতের ধান। এ ধানের মাহাত্ম্যই আলাদা, তাইতো এ ধানের এত দাম। অনেকটা গল্পের মতেই সে কাহিনী।  

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মাশকাটা গ্রামের ফাতেমা বেগম এ ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন, তাই এর নাম হয়েছে ফাতেমা জাতের ধান। বাগেরহাটে কৃষকের মুখে মুখে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে এ ধানের নাম।

যেভাবে আবিষ্কার : কীভাবে এ ধানের আবিষ্কার নিজেই জানালেন ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে লেবুয়াত ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের ধানখেতে হাইব্রিড আফতাব ০৫ ধানের চাষ করে। সেখানে ওই ধানের মধ্যে আমি ব্যতিক্রম ৩টি ধানের ছড়া (শীষ) দেখতে পাই। ওই ছড়াগুলো সংগ্রহ করে আমার ছেলেকে বলি এ ধানগুলো বীজ হিসেবে ব্যবহার কর। সে প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও মায়ের কথা রেখে পরের বছর জমিতে বীজ হিসেবে রোপণ করে। ওই বছর তিন ছড়া ধানের বীজে প্রায় আড়াই কেজি ধান উৎপাদন হয়।’

তিনি বলেন, ‘পরে কৃষি বিভাগের লোকেরা খবর পেয়ে আমাদের ধান দেখতে আসেন। আকারে বড় ও ছড়ায় ধানের সংখ্যা বেশি দেখে তারা আমাকে এ ধান সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন। আমি এ আড়াই কেজি ধানও বীজ হিসেবে ব্যবহার করি। এরপর এ বছর ৭৫ শতাংশ জমিতে ওই ধান রোপণ করি। এতে প্রায় ১শ’ ১০ মন ধান হয়েছে। এ খবর স্থানীয় কৃষকরা জানার পরে ধান সংগ্রহের জন্য সবাই আমার বাড়িতে আসতে থাকে। আমার ছেলে এ ধান বর্তমানে প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করছে। তারপরও আমরা চাহিদামত ধান দিতে পারছি না।’

এ ধানের চাষি ফাতেমার ছেলে লেবুয়াত বলেন, ‘মায়ের কথা শুনে ধান লাগাই। পরে ধানগুলো বড় হলে একটু আলাদা রকম দেখতে পাই। ধানের পাতাগুলো বেশি চ্যাপটা এবং ধানের মোচাগুলো বের হচ্ছিল কলার মোচার মত। পরে আগ্রহের সাথে ধানগুলোর একটু বেশি যত্ন শুরু করি। এরপর থেকেই আমাদের এ সফলতা। আমি চাই এ ধানের জাত সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আশপাশের কৃষকরা আমাদের কাছ থেকে বীজ হিসেবে এ ধান সংগ্রহ করছে।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোলায়মান আলী বলেন, ‘যখন ব্যতিক্রম এ ধানগুলি দেখতে পাই তখন আমার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তারা এ ধান সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রেরণ করেন। এ ধান নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। আমি মনে করি, এ ধানই হবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা জাতের ধান। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারে ।’

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘উপ সহকারী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ ধানের সম্পর্কে জানতে পেরে গবেষণা শুরু করা হয়। ধানগুলো দেখতে আকারে সাধারণ ধানের চেয়ে কিছুটা বড়। ধানের একটি পাতা প্রায় দেড় ইঞ্চি চওড়া। ধানের গাছগুলো ১৩৫ সে.মি. লম্বা। প্রতিটি ছড়ায় গড়ে ৯৪০টি ধানের দানা উৎপাদন হয়েছে। যা সাধারণ ধানের ছড়ার থেকে ৫ গুণ বেশি। আমরা এ বছর নমুনা সংগ্রহের জন্য ধান কেটেছিলাম। সে অনুযায়ী, প্রতি একরে ১৩০ মন ধান ফলন হয়েছে। এ ধান প্রাথমিক পর্যায়ে লবন সহিষ্ণু হিসেবে বিবেচনা করছি। কারণ ওই এলাকার মাটি লবনাক্ত এবং ঘেরের মধ্যে ধানটি চাষ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘এখন পর্যন্ত এ ধানের জাত সম্পর্কে জানা যায়নি। যেহেতু ধানটি ফাতেমা পেয়েছেন। আর ফাতেমার ছেলে চাষ করেছেন। সে কারণে আমরা এ ধানকে ফাতেমা ধান নাম দিতে চাচ্ছি। বর্তমানে এ ধানের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট ও রাজশাহী থেকে আমাদের কাছে এই ধান বীজ হিসেবে সংগ্রহ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

কেআই/এসি 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি