ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে ব্যানার হাতে একাই মা: ছবি ভাইরাল

প্রকাশিত : ১৯:৪০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দুই বছরের মেয়ে আয়েশা মনিকে ধর্ষণ করে হত্যার ঘটনায় ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে দিকবিদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন মা রাজিয়া সুলতানা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই এক ছবি ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায়, তিন সন্তানকে নিয়ে ব্যানার হাতে দাড়িয়ে আছে ধর্ষিতার মা। তার দাবী, ধর্ষকের পরিবারের ভয়ে এখন আর কেউ মুখ খুলছেনা।

গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় দুই বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর তিনতলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে। ধর্ষিতার মা রাজিয়া সুলতানা দাবি, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছে ধর্ষক নাহিদের পরিবার। এছাড়াও ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত নাহিদ ও তার পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় মানুষজনও ভয়ে এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত নাহিদকে গ্রেফতার করা হলেও ধর্ষণের বিষয়টিকে আড়াল করার অভিযোগ উঠছে স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। থানা পুলিশ বলছে, ধর্ষণ নয়, হত্যা করা হয়েছে শিশু আয়েশাকে। দুই বছরের শিশুকে কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি থানার ওসি তদন্ত।

আয়েশার মা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার মেয়েকে কোলে করে নিয়ে যায়, ধর্ষণকারীর মেয়ে দেখেছে। তার মেয়ে বলেছে, ‘বাবা ওরে নিয়ে আসছো কেন? দিয়ে আসো।’ আমার মেয়েকে জোর করে ধর্ষণ করে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়। মামলা তুলে নিতে আমাদেকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছে আসামিপক্ষ। আমি এর বিচার চাই, তার ফাঁসি চাই।

ধর্ষিতা আয়েশার মামা মো. আলী অভিযোগ করেন, আয়েশাকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন ৫৩/১জ দীননাথ সেন রোডের চারতলা বাড়ির মালিক নাহিদ। তিনি ভবনের তিনতলায় থাকেন। আয়েশা বিকেলে যখন খেলছিল, তখন তাকে খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ফ্ল্যাট নিয়ে যান নাহিদ। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়। সন্ধ্যার দিকে ফ্ল্যাটের খোলা বারান্দা থেকে আয়েশাকে নিচে ফেলে দেন নাহিদ। এ সময় আয়েশার চিৎকার আশপাশের লোকজনও শোনে।

তিনি বলেন, আয়েশাকে নিচে ফেলার শব্দ বাড়ির পাশের মাঠ থেকে কয়েকজন যুবক শুনতে পান। এলাকার লোকজন এসে আয়েশার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে নাহিদকে আটক করেন। আয়েশার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। শরীরেও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন নাহিদ। তবে রোববার নাহিদের মেয়ে (১৩) তার বাবার অপকর্মের কথা এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেয়।

আয়েশার বাবা মো. ইদ্রিস ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেন। মা রাজিয়া সুলতানা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাদের চার মেয়ের মধ্যে আয়েশা দ্বিতীয়।

ঘটনার পর আয়েশাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আয়েশার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়নাতদন্তের পর গতকাল জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় জড়িত নাহিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। এমনকি থানা ঘেরাও করেও বিক্ষোভ করেন তারা। এলাকাবাসীর দাবি, ‘আমরা ন্যায্য বিচার চাই, আমরা তার ফাঁসি চাই।’

আয়েশার মৃত্যুর ঘটনায় গেন্ডারিয়া থানা-পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এই মামলায় রোববার রাতে নাহিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা বলছে, নাহিদকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হচ্ছে।

অভিযুক্ত নাহিদ পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ব্যবসা করতেন। তবে বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন না। দীননাথ সেন রোডে নিজের চারতলা বাড়ির ভাড়ার টাকায় তার সংসার চলে। নাহিদ উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির লোক। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি ফের বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নাহিদের সংসার ছেড়ে চলে গেছেন।

পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার শামসুজ্জামান বাবু বলেন, প্রাথমিকভাবে আয়েশার শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে তার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি