ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সীতাকুণ্ড শিব চতুর্দশী মেলায় কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী

প্রকাশিত : ২৩:৪১, ৫ মার্চ ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৪৪, ৫ মার্চ ২০১৯

উপমহাদেশে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় মিলনোৎসব হিসেবে পরিচিত সীতাকুণ্ডের শিব চতুর্দশী মেলা গতকাল ( ৪ মার্চ) শুরু হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কয়েক লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এ উপলক্ষে এখন সীতাকুণ্ডে অবস্থান করছে। আগামী ৬মার্চ (বুধবার) পর্যন্ত মেলার মূল আনুষ্ঠানিকতা চলবে।

সোমবার বিকাল ৫টা ৫ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড থেকে শিব চতুর্দশী তিথি শুরু হয়েছে। মেলায় আসা পুণ্যার্থীরা ডাবের জল ও দুধ দিয়ে শিবস্নান করাবেন।

এই তিথিতে বিবাহিত নারীরা স্বামী ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় উপোস থেকে ব্রত পালন করছেন। এরপর অমাবস্যা তিথিতে ব্যাসকুণ্ডে পূর্বপুরুষের আত্মার সদগতি কামনায় স্নান-তর্পণ ও পিণ্ডদান করবেন পুণ্যপ্রত্যাশীরা।

♦ কেন এই মেলা

হিন্দুশাস্ত্র মতে, শিবলোক প্রাপ্তির আশায় সীতাকুণ্ডের শিব চতুর্দশী মেলা পুণ্যার্থীরা আসেন। মেলাটি সর্বপ্রথম কখন চালু হয়েছিল একথা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও তিনশ`বছর আগেও মেলা অনুষ্ঠিত হতো বলে জানা যায়। মেলায় যোগ দিচ্ছেন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাধু-সন্ন্যাসী ও দর্শনার্থী।

শিব কী বা কেন এই শিব আরাধানা এমন প্রসঙ্গে সাহিত্যিক ও ধর্মানুরাগী দেবাশিস ভট্টাচার্য্য একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, ‘যার মধ্যে সবকিছু লয়প্রাপ্ত হয় তাকে লিঙ্গ বলে৷ আকাশকে লিঙ্গ বলা হয় কারণ সবকিছু শূন্যে বা আকাশে লয় হয়৷ তাই বৈদিক শাস্ত্রের বাণী-আকাশং লিঙ্গমিত্যাহুঃ৷ আকাশ সর্বব্যাপী বলে লিঙ্গও সর্বব্যাপী৷ এটি কোন মানব লিঙ্গ নয়। মানবলিঙ্গ নিম্নমুখি কিন্তু এ লিঙ্গ ঊর্ধ্বমুখি হয়ে অবস্থান করছে৷ প্রলয়ের সময় সবকিছু আকাশে বা লিঙ্গেই মিশে যাবে অর্থাৎ লিঙ্গই সব গ্রাস করবে৷ তাই লিঙ্গরূপী শিবকে আমরা সংহারের দেবতা বলি৷ একমাত্র কুরুচি সম্পন্ন লোকেরাই লিঙ্গের অর্থ না জেনে একে কামজ দৃষ্টিতে বিচার করে মহাপাপভাগী হয়৷ যদি কামজ ব্যাপার হতো তাহলে কামজয়ী মহাজ্ঞানী ঋষিরা এ পূজার বিধান কখনো দিতেন না৷’

♦ এবার কেমন জমেছে মেলা

মেলার প্রথমদিন দেখা যায়, বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের চন্দ্রনাথ দর্শনে যেতে দেখা গেছে। ‘হর হর মহাদেব’, ‘জয় শিবসম্ভু’ ধ্বনি দিয়ে আবার কেউ লাঠিতে ভর দিয়ে চলছেন শিব দর্শনে। সমতল থেকে প্রায় ১২শ’ ফুট উপরে পাহাড় চূড়ায় প্রথমে স্বয়ম্ভুনাথ, এরপর বীরুপাক্ষ ও সর্বশেষ চন্দ্রনাথ মন্দিরের অবস্থান।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী`র সাথে কথা বলে জানা যায়, তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত আলোকসজ্জা, জল সরবরাহ, চিকিৎসা সেবা ও আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া অদ্বৈত-অচ্যুত মিশন, বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ক্যাম্প বসিয়ে তীর্থযাত্রীদের দেয়া হচ্ছে পানীয় জল ও চিকিৎসাসেবা। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মানবসেবায় নিয়োজিত অদ্বৈত-অচ্যুত মিশনের উদ্যোগে তীর্থ যাত্রীদের সেবাদান করা হচ্ছে।

♦ কীভাবে যাবেন মেলায়

শিব চতুর্দশী মেলাকে ঘিরে কয়েকটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড স্টেশনে আন্তঃনগর ও ঢাকার মেইল ট্রেনসহ সব ট্রেন যাত্রা বিরতি করছে।

♦ কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামের বাসে গেলেই সীতাকুণ্ড যাওয়া যায়। এছাড়া, মেলার সময় বেশিরভাগ ট্রেনই সীতাকুণ্ড স্টেশনে থামে। চট্টগ্রাম শহরের অলঙ্কার মোড় থেকেও বাসে আসা যায়।

♦ থাকার জায়গা

সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য ভালো মানের তেমন কোনো হোটেল না থাকলেও রয়েছে থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গা। সাধারণ মানের যে কয়েকটি হোটেল রয়েছে তাতে মেলার সময় কক্ষ পাওয়া মুশকিল। সামান্য কয়েকটি হোটেল পুণ্যার্থীদেরই প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। তাই সীতাকুণ্ডে ভ্রমণে গেলে চট্টগ্রামে থাকাই সবচেয়ে ভালো। চট্টগ্রাম শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল রয়েছে। তবে, অনেক পুণ্যার্থী মেলাতে যাওয়ার সময় থাকার জন্য তাবু কিংবা বিভিন্ন বেড নিয়ে যেতে পারেন।

আআ//এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি