ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দক্ষিণাঞ্চলে ‘গলাকাটা’ গুজব

প্রকাশিত : ১৫:৪২, ৮ জুলাই ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

‘বানারীপাড়ার মলুহার গ্রামের কৃষক আঃ রবের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবিরকে গত ৫ তারিখ বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে তিনজন লোক আবিরের বাবা অসুস্থ বলে মলুহার থেকে বানারীপাড়া ফেরিঘাটে মোটরসাইকেল যোগে নিয়ে যাচ্ছিল। যাবার পথে আবিরকে নাকি একটি কেক খেতে দেয়া হয়। তাদের দেয়া কেক খেয়ে আবিরের মুখ থেকে ফেনা বের হতে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে এই বিষাক্ত কেক বেশি প্রভাব না ফেলায় আবিরকে অজ্ঞান পার্টির (ছেলে ধরা) নিয়ে যেতে পারেনি। আবিরের ভাষ্যমতে অন্য আর একটি বাচ্চাকে তারা নিয়ে গেছে। এলাকার লোকে পরর্বতীতে আবিরকে বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। এই খবরের পরে বানারীপাড়ার ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকরা এখন আতঙ্কিত।’ মাসুম বিল্লাহ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এমন একটি পোস্ট করেন।

শুধু মাসুম বিল্লাহ নয়, রুপাতলী থেকে গলা কাটা সন্দেহে এক নারীকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। সেই নারীর কাছে রক্তমাখা রুমাল ও ছুরি পাওয়া গেছে- এমন তথ্যও শোনা যায়। ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় ছেলেধরা আতঙ্কে শিক্ষার্থী শূণ্য হয়ে পরছে স্কুলগুলো। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরে রাত জেগে ছেলেধরা ঠেকাতে পাহারা দেয় এলাকাবাসী। চারদিকে এভাবে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে গলাকাটা বা ছেলে ধরার গুজব।

৭ জুলাই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় আলাপ হয় রিকশা চালক হারুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, দুদিন আগে লঞ্চঘাটে একজন পথশিশুর গলায় চাকু ঠেকিয়ে ছিল তখন নাকি চারপাশের লোকজন দেখে ফেলায় ছেলেধরা লোকটি নাকি নদীতে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যায় বলে শুনেছে। চৌমাথা অটোস্ট্যান্ডে সিএনজি চালক আরাফাত হোসেন বলেন, তার বাসা পলাশপুরে। ঘরে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকেন। ঘরের বাইরে যখন বের হন তখন বাইরে থেকে তালা মেরে আসেন। আরাফাত শুনেছেন, দেশের বড় বড় কয়েকটি সেতু নির্মাণে ছেলেদের ‘মাথা’ পিলারের নিচে দিতে হয়।

সে কারণে বিদেশী কোম্পনীগুলো বরিশালে গলাকাটা ও ছেলে ধরা ছেড়েছে। উল্লেখিত কথাগুলো নগর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবখানে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে আলোচ্য। তবে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে বরিশালে কোন ছেলেধরা বা গলাকাটার অস্তিত্ব নেই। এগুলো স্রেব গুজব। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের না হলেও কলাপাড়ায় বাঙালী ও চীনা শ্রমিকদের সংর্ঘষের পর এমন গুজব ছড়িয়ে পরছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে।

তবে বিভিন্ন থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে এমন তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, অনেক লোকের মুখে এই গুজবটি শুনেছি। আসলে এসবের কোন ভিত্তি নেই।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে রুপাতলী থেকে যে নারীকে আটক করে থানায় সোর্পদ করেছিল তিনি ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। আসলে ছেলেধরার যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

চরফ্যাশন থানার ওসি সামসুল আরেফিন জানিয়েছেন, ম্যাসেঞ্জারে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে এই গুজবটি ব্যাপকভাবে ছড়ানো হচ্ছে। এই গুজব ছড়ানোর নেপথ্যে কারা তাদের সনাক্তে আমরা চেষ্টা করছি।

বিভিন্ন বয়সী লোকের সঙ্গে কথা বলে একই ধরনের আতংকের কথা জানা যায়। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। মুখে মুখে ছড়ানো হলেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় বিষয়টিকে বাড়তি নজরদারীতে রাখা হয়েছে।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ জানিয়েছেন, ছেলেধরা বা গলাকাটা গুজবটি মহামারি রূপে ছড়িয়ে পরছে। অভিভাবকমহলে এমন আতংক ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এটি কিন্তু কার্যতভাবে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। আমি মনে করি প্রশাসনের উচিত গুজব ঠেকাতে এগিয়ে আসা। শুধু প্রশাসন নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবেও এসব প্রতিহত করতে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

বরিশাল জেলার জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানিয়েছেন, এগুলো নিত্যান্তই গুজব। প্রাচীন যুগে এমন গল্পকাহিনী মানুষ বিশ্বাস করতো। মানুষ এখন আধুনিক। অযৌক্তিক এসব কথায় বিশ্বাস করবে কেন? আমি মনে করি এসব গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

এএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি