যে কারণে আটক মিন্নি
প্রকাশিত : ১৯:৩৭, ১৭ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ২০:১৮, ১৭ জুলাই ২০১৯
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এবার ফেঁসেছেন প্রধান সাক্ষী ও নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদের পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
আইন অনুযায়ী আজ তাকে আদালতে উঠানো হয়। এদিন পুলিশের পক্ষ থেকে মিন্নির ৭ দিনের রিমাণ্ড আবেদন করলে ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার নিজ বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লাইনে আনা হয়।
গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। সকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করার জন্য বরগুনা পুলিশ লাইনে আনা হয় এবং রাতে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
মামলার প্রধান আসামি মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানোর কারণ হিসেবে পুলিশ সুপার আরও বলেন, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ ও অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই রাত ৯টার সময় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যায় জড়িত থাকা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় পুলিশ তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করলো।
একই সময়ে পুলিশ সুপার জেলা বিশেষ শাখা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ মামলার ১ নম্বর সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং সুদীর্ঘ সময়ে পাওয়া তথ্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে রাত ৯টায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে মিন্নি সরাসরি সম্পৃক্ত এমন তথ্য দিয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত কারণ ও আক্রোশ থেকে এই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রিফাতের স্ত্রী মিন্নি সরাসরি সম্পৃক্ত। এ জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মেয়েকে গ্রেফতার করায় হতভম্ব মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে সারাদিন মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) রাত ৮টার দিকে নিহত রিফাত শরীফের বাবা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন তার ছেলে হত্যার ঘটনায় পুত্রবধূ মিন্নিও জড়িত বলে সন্দেহ করছেন তিনি।
সেদিন মিন্নি হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমন সন্দেহের পেছনে ১০টি কারণও বলেন তিনি। তার সন্দেহের বিষয়টিকে আমলে নেয় পুলিশ।
আবদুল হালিম দুলাল শরীফ অভিযোগ করে বলেন, ‘রিফাত হত্যাকাণ্ডের নতুন ভিডিও ফুটেজ দেখে আমি ধারণা করছি, আমার ছেলেকে হত্যার পেছনে তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত। মিন্নি যদি হামলাকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা না করে রিফাতকে জড়িয়ে ধরতো, তাহলে আমার ছেলে নির্মম হত্যার শিকার হতো না।’
তিনি বলেন, ‘আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে সে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
তবে এর পরদিন মিন্নি পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘বরগুনায় যারা ০০৭ গ্রুপ সৃষ্টি করেছেন, তারা খুবই ক্ষমতাবান ও অর্থশালী। তারা রিফাত হত্যার বিচারকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য আমার শ্বশুরকে বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। খুনিদের আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
আই/এসি
আরও পড়ুন