মৌলভীবাজারে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে আটক ৫
প্রকাশিত : ০৮:৫৩, ২২ জুলাই ২০১৯
মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া উপজেলায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এক রিকশা চালক, এক সিএনজি (অটোরিক্সা) চালক ও একজন দিনমজুর। কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে আটক হয়েছেন আরো ২ জন। অন্যদিকে, জুড়ি উপজেলায় বোরকা পড়ে প্রতিবেশির বাড়িতে গেলে আরেক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে এলাকাবাসী।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মো. আলমঙ্গীর হোসেন জানান, রোববার বিকেলে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয় চন্দন পাল (৩০) নামে এক রিকশা চালক। সে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের কালিপদ পালের ছেলে।
তিনি জানান, রোববার দুপুরে চন্দন তার পূর্ব পরিচিত এক লোকের সন্ধানে স্থানীয় চাঁদনীঘাট এলাকায় খোঁজাখুঁজি অবস্থায় সন্দেহজনকভাবে জনতার রোষানলে পরে গণপিটুনির শিকার হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে আহতাবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। আহত যুবক পেশায় একজন রিকশাচালক। সে শ্রীমঙ্গল শহরে রিকশা চালায়।
অন্যদিকে, রাত ৯টার দিকে কুলাউড়া উপজেলায় বসন্ত শব্দকর (২২) নামে এক যুবককে আটক করে এলাকাবাসী প্রহার করার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্বার করে থানায় নিয়ে আসেন বলে জানান কুলাউড়া থানার এস আই কানাই চক্রবর্তী। বসন্ত শব্দকরের বাড়ী পাশ্ববর্তী উপজেলা কমলগঞ্জের নরেন্দ্র পুরে তার পিতার নাম নরেন্দ্র শব্দকর। সে পেশায় একজন দিনমজুর। সে তার আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার পথে তার কথাবার্তায় অসংগতি দেখে পাবলিক তাকে আটক করে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আব্দুস ছালেক জানান, রোববার রাত ৮টার দিকে কালিঘাট ইউনিয়নের কাকিয়াছড়া এলাকায় দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করতে একটি সিএনজিকে ধাওয়া করলে সিএনজি ড্রাইভার সিএনজি ফেলে চা বাগানের লেবার লাইন দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় র্যাব দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে যায়। এদিকে, সিএনজি ড্রাইভার কামাল হোসেন (২৫) পালানোর সময় ভিতরে লেবার লাইনে চা শ্রমিকরা তাকে আটককরে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্বার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এদিকে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পৃথক দুটি স্থান থেকে রোববার সন্ধ্যায় ছেলেধরা সন্দেহে এলাকাবাসী দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, রোববার সন্ধ্যায় মুন্সীবাজার ইউনয়িনের উবাহাটা গ্রামে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরায় শহিদুর রহমান (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রামবাসী ধরে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা শহিদুরকে উদ্ধারের করে থানায় নিয়ে আসেন। সে কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়েনের সরইবাড়ি গ্রামের মুখছেুর রহমানের ছেলে।
একই সময় রহিমপুর ইউনিয়নের দেওড়াছড়া চা বাগান এলাকায় সন্দেহজনক ঘোরাফেরার কারণে চা শ্রমিকরা সানা উল্লা (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে খবর দেয়। পরে থানার পুলিশের একটি দল সানা উল্লাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার শওকত আলীর ছেলে। কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান জানান, এদের একজন মানষিক প্রতিবন্ধী অন্যজনও মাঝেমধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যান পরে পরিবারের লোক তাকে খোঁজ করে ফিরিয়ে নেয়।
এদিকে রোববার দুপুরে জেলার জুড়ি উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের মাধব টিলা এলাকায় মো. আলম মিয়া (২৫) নামে এক যুবক চুপি চুপি প্রতিবেশি লায়লা বেগমের ঘরের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়লে লায়লা দরজা খুলে দেন। এ সময় বুরকা তোলামাত্র পুরুষের মুখমণ্ডল দেখে ছেলেধরা চিৎকার দিয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তাকে সবাই চিনতে পারেন। জুড়ি উপজেলার ওসি তদন্ত আমিনুল ইসলাম জানান, আলম এ কাজের জন্য থানা পুলিশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
অপর দিকে শনিবার রাতে কমলগঞ্জের দেওড়াছড়া চা বাগানে ছেলাধরা সন্দেহে ৫০ বছর বয়সী অজ্ঞাত পরিচয় এক লোক গণধোলাইয়ে নিহত হন।
এছাড়াও শুক্রবার রাতে বড়লেখার ইটাওই এলাকায় মদ্যপায়ী দুইজনকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ তাদের হাত থেকে দুইজনকে উদ্বার করে আনেন বলে জানান বড়লেখা থানার ওসি তদন্ত জসিম উদ্দিন।
এদিকে এ ঘটনায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রত্যেক উপজেলার মাইকিং করে থানা পুলিশ।
আরও পড়ুন