ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

জয়পুরহাটে গৃহবধূর দগ্ধ লাশ উদ্ধার

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২১:৫৭, ২৫ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ২১:৫৮, ২৫ জুলাই ২০১৯

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে অসীমা রানী সীমা (৩২) নামে এক গৃহবধূর আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহত অসীমা উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়নের নাপিত পাড়া গ্রামের পলাশ চন্দ্র শীলের (৩৮) স্ত্রী। পলাশ চন্দ্রের দাবি, তার স্ত্রী অভিমান করে সকলের অগোচরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে গৃহবধূর পরিবারের দাবি, এটা মিথ্যা সাজানো ঘটনা। আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।  

এদিকে এটি হত্যা না আত্মহত্যা? এ বিষয়ে ময়না তদন্ত শেষে নিশ্চত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) কিরণ কুমার রায়। তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে। প্রাথমিকভাবে ওই গৃহবধূর স্বামী ও দেবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নাপিতপাড়া গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র শীলের ছেলের সঙ্গে আট বছর পূর্বে বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার শান্তা গ্রামের বিরেন সরকারের মেয়ে অসীমা রানী সীমার বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তাদের ঘরে প্রাপ্তী রানী (৮) নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। 

বুধবার দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রী ও কন্যা সন্তান একই ঘরে ঘুমিয়েছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে এলাকাবাসীরা জানতে পারে ওই গৃহবধূ আগুনে পুড়ে মারা গেছে। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

নিহতের স্বামী পলাশ চন্দ্র শীল বলেন, প্রতিদিনের মত বুধবার আমি আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তার স্কুলে যাই। সকাল দশটায় আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলেন। এরপর আমি বাড়ি আসলে স্ত্রী আমার কাছে দাবি করে বলে, আমাকে আলাদা করে বাড়ি ও বাথরুম করে দাও। আমি বলেছি, সব করে দিব। এরপরে আর কোন কথা হয়নি। 

তিনি আরও বলেন, বুধবার মধ্য রাতে আমরা সবাই এক ঘরেই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ মধ্য রাতে একটি শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হই। পরে দেখি রান্না ঘরের পাশের ঘর থেকে আগুন বের হচ্ছে। তখন আমি সবাইকে চিৎকার করে ডেকে তুলি এবং বাড়ির বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করি। আমার পরিবারের লোকজন ওই ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে দেখে আমার স্ত্রীর গায়ে আগুন জ্বলছে। এরপর আগুন নিভাতেই আমার স্ত্রী মারা যায়। আমার স্ত্রী বাড়িতে থাকা কেরসিন তেল গায়ে ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গৃহবধূর শ্বশুর প্রফুল্ল চন্দ্র শীল বলেন, ঘটনার দিন রাতে ওরা তিনজন এক ঘরেই ছিল। মধ্য রাতে চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি এই ঘটনা। আমার ছেলের সাথে কোন দিন পুত্রবধূর ঝগড়া হয়নি।

তবে নিহত গৃহবধূর কাকা পরিতোষ বলেন, আমাদের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছিল অসিমা রানী স্টোক করে মারা গেছে। এখানে এসে দেখি আগুনে পুড়ে মারা গেছে।

নিহত গৃহবধূর বড় দুলাভাই পরেশ চন্দ্র বলেন, আমার শালীর দেবর আমাকে ফোন করে জানিয়েছে সে স্টোক করে মারা গেছে। এখানে এসে দেখি সে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। আমার শালিকাকে মারপিট করে মেরে ফেলে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। যেই ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে সেই ঘরে আগুনে কোন কিছুই পুড়ে যায়নি। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যা।

এদিকে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) তাজুল ইসলাম বলেন, যে ঘরে ঘটনাটি ঘটেছে ওই ঘরের ভেতর থেকে দরজা আটকানো ছিল বলে ধারণা করছি। লাশের মুখমন্ডল, হাত, পাজর আগুনে পুড়ে গেছে। ঘর থেকে কেরোসিনের জার উদ্ধার করা হয়েছে। এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা -তা এখনো নিশ্চিত নয়। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। তার পরেও বিষয়টি আরও তদন্ত করা হচ্ছে। 

এদিকে গৃহবধূর বাবা বিরেন সরকার বলেন, এই মুহূর্তে আমি বেশি কিছু বলতে পারব না। শুধু এইটুকু শোনেন, আমি এই ঘটনায় মামলা অবশ্যই করব।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) কিরণ কুমার রায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, এই ঘটনায় এখন মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি