ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

মিন্নির শেষ এসএমএস ‘আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৮, ১৪ আগস্ট ২০১৯

মিন্নি। এক আলোচিত নাম। যিনি সাক্ষী থেকে হয়েছেন আসামি। বরগুনার রিফাত হত্যার ঘটনায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির গ্রেফতারের আলোচনা সর্বত্র। 

আলোচনা যতটা রিফাতের খুনিদের নিয়ে হওয়ার কথা, তার থেকে মিন্নিকে নিয়েই দেশের গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়। ফলে, রিফাত হত্যার ঘটনায় মূল্য রহস্য উদ্ঘাটন ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির উপস্থিতিতে সামনে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন স্বামী শাহ নেওয়াজ রিফাত শরীফ। 

হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা মূলহোতা নয়নকে প্রধান করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। এর কয়েকদিনের মাথায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নয়ন। 

হত্যার ঘটনার পর থেকে আলোচনায় রিফাতের স্ত্রী। আলোচনার বাহিরে থাকলেও সময়ের ব্যবধানে রিফাত হত্যার প্রধান আসামি সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্কের মধ্যদিয়ে আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হতে থাকে মিন্নির ভূমিকা নিয়ে। 

প্রথম ভিডিও প্রকাশে মিন্নি নায়িকার চরিত্রে উত্তীর্ণ হলেও, দ্বিতীয় আরেকটি ভিডিও প্রকাশ হলে মিন্নিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। যেখানে অনেকেই রিফাত হত্যার ঘটনায় মিন্নির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন।

রিফাত হত্যার পর স্ত্রী মিন্নি বলেছিলেন, খুনি নয়ন তাকে বিয়ের আগে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত। নয়নের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। 

কিন্তু সোশ্যাল মাধ্যমে নয়নের সঙ্গে বিয়ের কাবিননামাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশিত হলে সমালোচনার মুখে পড়েন মিন্নি। 

এদিকে হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনসহ ম্যাসেজ আদান-প্রদানের তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য জানান, নয়ন বন্ডের মায়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল ফোন নম্বরটি গোপনে ব্যবহার করতেন মিন্নি। নয়ন বন্ডই এই সিমটি মিন্নিকে দিয়েছিলেন। মূলত রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ নানা কারণে গোপনীয়তা বজায় রাখতে ওই সিমটি মিন্নি গোপনে ব্যবহার করতেন। এছাড়া আরও কয়েকটি নম্বর দিয়েও নয়নের সঙ্গে কথা বলতেন মিন্নি।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৯টা আট মিনিটের সময় এই নম্বর দিয়ে নয়ন বন্ডকে কল দিয়ে ছয় সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর আবার সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটের সময়ও নয়ন বন্ডের দেয়া ওই নম্বরটি দিয়েই আবারও নয়ন বন্ডকে কল দেন মিন্নি। এ সময় নয়ন বন্ডের সঙ্গে ৩৫ সেকেন্ড কথা বলেন মিন্নি। এরপর ৯টা ৫৮ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে থাকা ওই নম্বরটিতে কল দেন। এ সময় মিন্নি ও নয়ন বন্ডের কথোপকথন হয় ৪০ সেকেন্ড।

এরপর সকাল সোয়া ১০টার দিকে কলেজের সামনেই রিফাত শরীফের ওপর হামলা করে বন্ড বাহিনী। হামলার পর বেলা ১১টা ৩১ মিনিটের সময় নয়ন বন্ড মিন্নিকে একটি এসএমএস পাঠান। এরপর আবার বিকাল ৩টার সময় মিন্নিকে কল দিয়ে মিন্নির সঙ্গে এক মিনিট ২০ সেকেন্ড কথা বলেন নয়ন বন্ড।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরগুনা জেলা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘তদন্তের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ডের ব্যবহৃত নম্বরের কললিস্ট ও এসএমএস কন্টেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এরপর এগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে দেখা গেছে, রিফাত শরীফ মারা যাওয়ার পর নয়ন বন্ড মিন্নির কাছে একটি এসএমএস পাঠান। বিকেল ৪টার কিছু সময় আগে পাঠানো ওই এসএমএসটিতে লেখা ছিল, “আমারে আমার বাপেই জন্ম দেছে।”

উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। 

এরপর ২৭ জুন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সন্দেহভাজন আরও চার পাঁচজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়। 

গত ২ জুলাই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড (২৫) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি