এবার সিসি ক্যামেরার আওতায় রাজশাহীর সেই বালুমহাল
প্রকাশিত : ২২:০৬, ৩১ আগস্ট ২০১৯
বৈধ-অবৈধ বিতর্ক এড়াতে এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কী-না, তার রেকর্ড রাখতে রাজশাহীতে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে একটি বালুমহাল। চরখিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালুমহালে ইতোমধ্যেই বসানো হয়েছে ১৬টি সিসি ক্যামেরা। দু-একদিনের মধ্যে এ বালুমহালে পুনরায় বালু উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইজারাদার।
হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশনের রুলের বরাত দিয়ে গত ২৪ জুলাই রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত এই বালুমহালের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল। এ নিয়ে গত ২০ আগাস্ট হাইকোর্ট বিভাগে আরেকটি রিট পিটিশনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দেন। সে মোতাবেক বালুমহালটিতে কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয় ইজারাদার।
বালুমহাল ইজারা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মারুফ হোসেন শাওন জানান, বালুমহালটিতে পুনরায় কার্যক্রম শুরুর জন্য গত ২২ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের সঙ্গে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, আইনজীবীর সার্টিফিকেট ও দৈনিক কাজের লিস্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। এরপর বালু উত্তোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওই এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
নিয়ম বহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে কিনা তা রেকর্ড রাখতে এই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বালুমহাল ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রিট পিটিশনকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানান, পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, ‘‘রাজশাহী নগরের বুলনপুর এলাকার বালু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের রিট পিটিশনের (রিট নং- ৬২০১/১৯) ভিত্তিতে যে আদেশ প্রদান করা হয়েছে বা ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) রাজশাহীকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বা যে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা চরখিদিরপুর ও চরশ্যামপুর বালুমহাল ইজারা প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স আমিন টেডার্স’ এর প্রতি প্রযোজ্য হতে পারে না।’’ এর ফলে এ বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনের বাধা নেই।
এ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, আনোয়ার হোসেন যে রিট পিটিশন (রিট নং- ৬২০১/১৯) করেছিলেন হাইকোর্ট তার উপর রুল জারি করেন। রুলে রাজশাহীর ডিসিকে পবা উপজেলা এলাকায় অবৈধ বালুমহাল বন্ধ করে হাইকোর্টকে জানানোর নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই রুলের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একটি বৈধ বালুমহাল বন্ধ করেছে। যা রুলের নির্দেশনা লংঘন হয়েছে বলে হাইকোর্ট বেঞ্চে তুলে ধরা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, ইজারাদার হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের কপিসহ পুনরায় বালু উত্তোলন কার্যক্রম চালানোর আবেদন করেছেন। তবে অফিসিয়ালভাবে হাইকোর্টের কোনও কপি এখনও পাইনি। পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দরপত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘মেসার্স আমিন টেডার্স’ চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর মৌজার ১২০ একরের বালুমহাল দুই কোটি দুই লাখ টাকায় ইজারা পায়। গত ১৪ এপ্রিল থেকে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করে ।
এছাড়াও বালু পরিবহনের জন্য ইজারার শর্ত মোতাবেক (সুবিধাজনক স্থান দিয়ে বালু পরিবহন) চরশ্যামপুর মৌজার উত্তর পাশে কাজলা মৌজার পদ্মা পাড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি লিজ নিয়ে মজুদ করা হয়। সেখান থেকে বালু পরিবহনের জন্য তালাইমারি সড়ক ব্যবহারে সিটি করপোরেশনের কাছে টোল ইজারাও নেয় ইজারা প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু এই বালুমহালে উত্তোলন কার্যক্রমের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর গত ২৪ জুলাই জেলা প্রশাসনের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত বালুমহালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। একইসঙ্গে সেখানে কর্মরত আট শ্রমিককে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচী পালন করে স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
এনএস/
আরও পড়ুন