দু`মাস পর সুন্দরবনে মাছ শিকার শুরু
প্রকাশিত : ১৯:০৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:০৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সুন্দরবনের নদী-খালে দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধসহ বন অপরাধ কমানোর জন্যই মূলত ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে মাছ শিকার নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ।
নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যাওয়ায় (১ সেপ্টেম্বর) রোববার সকাল থেকে বন নির্ভরশীল উপকূলের হাজার হাজার জেলে জাল-নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে মাছ শিকারে যেতে শুরু করেছেন।নিষেধাজ্ঞার দরুন মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে এখন কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে।পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(ডিএফও)মাহমুদুল হাসান এ তথ্য জানায়।
দীর্ঘ দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মোংলাসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকার দরিদ্র জেলে পরিবার অনেকটা অভাব অনটনেই দিন কাটায়। অনেকে কাজের সন্ধানে এলাকা ছেড়ে শহরে পাড়ি জমান।দুই মাস দূর-দূরান্তে কাজ কর্ম করেছেন তারা।নিষেধাজ্ঞা শেষের খবর পেয়ে আবারও নিজ গ্রামে ছুটে এসেছেন তারা। এখন পুরনো নৌকা ও জাল মেরামত করে বন বিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে যেতে শুরু করেছেন সুন্দরবনে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(ডিএফও)মাহমুদুল হাসান আরও জানান, জুলাই-আগস্ট দুই মাস সুন্দরবনে মাছের প্রজনন মৌসুম।এসময় মাছ ধরা হলে ডিমওয়ালা ‘মা’ মাছ মারা পড়ে। অসাধু এক শ্রেণির জেলেরা এক সঙ্গে বেশি এবং বড় মাছের আশায় বনের ছোট-বড় খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে থাকেন।এতে মৎস্য সম্পদসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও ধ্বংস হয়ে থাকে।এর বিরুপ প্রভাব পড়ে থাকে সুন্দরবনের গোটা জীববৈচিত্র্য।তাই মাছের প্রজনন ও বিষ দিয়ে মাছ শিকাররোধে বন বিভাগ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলার জয়মনিরঘোল এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম ও তালেব খান বলেন, বন বিভাগ নিষেধাজ্ঞা জারির আগে জেলে নৌকা প্রতি আমাদের এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকা পর্যন্ত দাদন দেয়া ছিল। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দাদন দেয়া টাকা জেলেরা বসে বসে খেয়ে শেষ করেছেন। এখন নতুন করে আবার দাদন দিয়ে তাদেরকে সুন্দরবনে পাঠাতে হবে।এতে আমাদের এ মৌসুমে খরচ উঠবে কিনা তাই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারপরও এটাই পেশা, লাভ-লোকসান যাই হোক, এছাড়া অন্য কিছু করারও নেই।
মোংলা বাজারের মৎস্য আড়ৎদার দ্বীন ইসলাম, মজিবর শেখ ও জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, চিলা, জয়মনি, গাববুনিয়া, মিঠাখালী, বাশতলাসহ উপজেলার শত শত জেলে আগে থেকেই মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে বসে আছে। এখন দীর্ঘদিন বসে থাকার পর যা জেলেদের আয় হবে তা দিয়ে দাদন পরিশোধ করবেন নাকি সংসার চালাবেন এ নিয়ে দু:শ্চিতায় পড়েছেন তারা।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন অফিসার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বন অপরাধ দমন বিশেষ করে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধে দুই মাস সুন্দরবনে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল।যেহেতু নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে তাই ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেরা পাস নিয়ে বনে ঢুকতে শুরু করেছেন।রোববার শুধু চাঁদপাই ষ্টেশন থেকেই পাস নিয়ে প্রায় দেড়শ জেলে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন বলেও জানান তিনি।এছাড়া অন্যান্য ষ্টেশন থেকেও পাস নিয়ে জেলেরা বনে যাচ্ছেন।
কেআই/
আরও পড়ুন