ঢাকা, বুধবার   ০২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে বেনাপোল বন্দরের পণ্যাগার

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২০:২৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

দেশের বৃহত্তর বেনাপোল স্থলবন্দরের অধিকাংশ গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ডে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জাম থাকলেও তা অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যে কারণে পণ্যগার অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্দরে জায়গা সংকটের কারণে আমদানিকৃত অতি দাহ্য পণ্যের সঙ্গে সাধারণ পণ্য রাখা হচ্ছে।এতে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে।

ইতিপূর্বে বন্দরে অন্তত সাতবার আগুন লেগেছে। সর্বশেষ গত ২৬ আগষ্ট বন্দরের ৩৫ শেডে আগুনে কোটি টাকার আমদানিকৃত পন্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যে কারণে বন্দর ব্যবহারকারীরা পণ্যাগারে অগ্নিকান্ডের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
 
বন্দর ব্যবহারকারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বন্দরের গুদামে আটবার আগুন লেগেছে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় প্রতিবারই আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।দমকল বাহিনী ডেকে আগুন নেভাতে হয়েছে। এর মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে আমদানিকৃত কোটি কোটি টাকার পণ্য।অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া পণ্যের ক্ষতিপূরণ পাননি আমদানিকারকেরা।আগুন নিয়ন্ত্রণে বন্দরে যেসব সরজ্ঞাম আছে তা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল বন্দরে ৩৮টি গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে।এখানে ধারণ ক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিকটন পণ্য। কিন্তু রাখা হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিকটন পণ্য।গাদাগাদি করে পণ্য রাখার কারণে অগ্নি ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। 

সম্প্রতি, বন্দরের ৩২ নম্বর গুদামে গিয়ে দেখা গেছে, ৪০০ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতার এই গুদামে অতি দাহ্য ও সাধারণ পণ্য একই জায়গা পাশাপাশি রাখা হয়েছে। ড্রাম ভর্তি ডাইস(রঙ), বস্তা ভরা রেইজিং পাউডার, ছাপাখানার কালিসহ অন্যান্য পণ্য রাখা আছে। গুদামের এক কোনায় পণ্যের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সহজে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র(এক্সটিংগুইসার)।যার সবগুলোই অকেজো।
 
আগুন নেভানো যন্ত্রগুলো এভাবে পরিত্যক্ষ অবস্থায় পড়ে আছে কেন? জানতে চাইলে গুদামের ইনচার্জ ফারুকুজ্জামান বলেন,‘এগুলো দেখভাল করার জন্যে বন্দরের আলাদা কর্মী রয়েছে।তারা এসব দেখে। আমি শুধু বলতে পারি, ২০ কেজি ওজনের ১০টি যন্ত্র রয়েছে। এগুলো চালু আছে কিনা তা আমি জানি না।’

পাশের ৩৪ নম্বর গুদামে গিয়ে দেখা গেলো, মটরগাড়ির ইঞ্জিন তেল (লুব্রিকেন্ট), রাসায়নিক, ডাইস ও ছাপাখানার কালিসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য রয়েছে।এখানেও পণ্য রাখার কোন শৃঙ্খলা নেই। আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলোও পরিত্যক্ষ অবস্থায় পড়ে আছে। ওই গুলো দেখলেই বোঝা যায়, বহুকাল যন্ত্রগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। ২৯ নম্বর গুদাম ও খালি ট্রাক টার্মিনালে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। আগুন নেভানো নিজস্ব ভালো কোন ব্যবস্থাপনা নেই। 

বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর বন্দরের ২৩ নম্বর গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে।এতে গুদামে রাখা তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের আমদানিকৃত কাপড়,ডাইস(রঙ), বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, মোটর গাড়ির যন্ত্রাংশ, ফাইবার, মশা তাড়ানো স্প্রে, তুলা, কাগজসহ বিভিন্ন ধরণের পণ্য পুড়ে যায়।যার দাম কয়েক কোটি টাকা। তখন তদন্ত কমিটি করা হলেও তিন বছরেও ব্যবসায়িরা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি।
      
এব্যাপারে আমদানি-রফতানিকারক সমিতি বেনাপোলের সহ-সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বন্দরের প্রতিটা গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ড অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্দরের পরিচালক ও কর্তৃপক্ষকে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা কোন কর্র্ণপাত করেনি। গত ১০ বছরে বন্দরে অন্তত আটবার আগুন লেগেছে।এতে শত শত কোটি টাকার পণ্য পুড়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বন্দরের কোন তদারকি নেই। এদিকে প্রায় বন্দরের গুদাম থেকে পণ্য চুরি হচ্ছে। চুরি ঠেকাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, চুরির প্রমাণ ঢাকতে অনেক সময় গুদামে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়। আজো এ বন্দর সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়নি। যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে।’ সর্বশেষ গত ২৬ আগষ্ট ৩৫ নম্বর শেডে আগুনে ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা নেই। গুদামে অতি দাহ্য পণ্যের সাথে সাধারণ পণ্য রাখা হচ্ছে।এতে গুদামগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা বাড়াতে হবে।আগুন নেভানোর জন্যে বন্দরের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে কেবল এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।’

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান জানান,বেনাপোল বন্দরের শেডে এর আগে কয়েকবার আগুন ধরে ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হয়েছে।আমরা বারবার বলার পরও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় না। ব্যবসায়ীরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে, বন্দরের ভাড়া প্রদান করছে অথচ তাদের আমদানিকৃত পণ্যের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব পণ্যের বীমাও করেন না। 
এ ব্যাপারে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক প্রদোষ কান্তি দাস বলেন,‘এখন গরমের সময়। যে কোন সময় আগুন লাগার মতো মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য আমরা সর্তক রয়েছি। প্রতিটা গুদামে ফায়ার হাইডেন পয়েন্ট ও ফায়ার পাম্প রয়েছে। যেসব গুদামে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ রয়েছে সেগুলো দ্রুত ত্রুটিমুক্ত করা হবে।’  
কেআই/


     
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি