রাজাপুরে ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা, শাহিন বাহিনীর প্রধান গ্রেফতার
প্রকাশিত : ২০:২১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
ঝালকাঠির রাজাপুরে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ভূমি দস্যুতাসহ এলাকার আতংক আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি (নব্য আ’লীগ) ও শাহিন বাহিনীর প্রধান মোঃ তারিক শাহিন মৃধাকে (৪০) সন্ত্রাসী হামলাসহ ৫ জনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাজাপুর সদরের মেডিকেল মোড়স্থ নিজ বাসার সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়েছে।
শাহিন মৃধা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাহাজাহান ওমরের মামাতো ভাই ও উপজেলার শুক্তাগড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মজিবুল হক মৃধার পুত্র।
গত ২৩ এপ্রিল মামলাটি রেকর্ড হলেও গত চার মাস ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে সে প্রকাশ্যে রাজাপুর শহরে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। তবে ঝালকাঠির নবাগত পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের কঠোর অবস্থানের কারণে রাজাপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে।
মামলার বিবরণে উল্লখ করা হয়েছে, বাদী জামাল হোসেন হাওলাদারের পুত্র আসিফকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কয়েক বছর পূর্বে আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক মৃধার পুত্র ও শাহিন বাহিনীর প্রধান শাহিন মৃধা ৪ লাখ টাকা নেয়।
পরবর্তীতে দু'বছর অতিবাহিত হলেও ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা না করায় জামাল হোসেন টাকা ফেরত চাইলে নানা টালবাহানা করতে থাকে শাহিন। এক র্পযায়ে গত ২১ মার্চ বাদীর বাড়ির সম্মুখে শাহিন মৃধার সঙ্গে দেখা হলে টাকা নিয়ে দু'জনের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে দেখিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয় শাহিন।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, পরের দিন ২২ মার্চ সকালে শাহিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা রামদা, ছেনা, চাপাতি, গাছকাটা দা, লোহার রড ও অগ্নেয়াস্ত্রে স্বজ্জিত হয়ে শাহিন মৃধার সহযোগী গিয়াস বাড়িতে ঢুকে জামাল হাওলাদার ও তার পুত্র আসিফ হাওলাদারকে (২৫) ডেকে আনে। তারা রাস্তায় বের হতেই ধারালো অস্ত্রে স্বজ্জিত আসামিরা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে। এসময় শাহীন মৃধা ধারালো রামদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আসিফের মাথায় কোপ দেয়। একইসঙ্গে তার ক্যাডার সোহাগ মৃধা (৩০) বাদী জামাল হাওলাদারকে কোপাতে থাকে।
এ সময় তাদের ডাক চিৎকারে মোঃ জামাল (৫০), নয়ন ওরফে হৃদয় (২৫) ও শাহাদাতসহ কয়েকজন ছুটে আসলে আসামি ইমাম হোসেন (৩৫), জসিম উদ্দিন কাজল (৪৫), নয়ন (৩০), মনির সিকদার (৪০), মজিবর (৪৫) তাদেরকে বেপরোয়াভাবে কুপিয়ে জখম করে।
এক পর্যায়ে আসামি দেলোয়ার (৩০), জাকির (৩৮), হাবিবুর রহমান শফিক (৩২),মেহেদী (৩০), মামুন খান, রিগান মীরা (৩০), লিটন মল্লিক (৩২), বাবুল চৌধুরী ও জয়নাল (৩০) সহ আরও ৫/৬ জন মিলে তাদেরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে-পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
এ ব্যাপারে বাদীর কয়েকজন আত্মীয় জানায়, শাহিন মৃধা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সে নিজ নামে শাহিন বাহিনী গঠন করে উপজেলা জুড়ে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা, অস্ত্রবাজী, চুরি-ডাকাতি এবং বহু মানুষকে বিদেশে পাঠানোর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ফলে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
তারা আরও জানায়, রাজনৈতিক সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পূর্বে সে সৌদি আরবে কর্মরত ছিল। সেখানে প্রবাসী কয়েক শত বাংলাদেশী শ্রমিকের বেতনের কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করে পালিয়ে রাজাপুরে আসে। এরপর নগদ টাকা ছড়িয়ে রাতারাতি উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি বনে যায়।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন মৃধা জানায়, গত মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের দলীয় নৌকা মার্কার প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলা ও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। নির্বাচনে আমাদের নৌকার প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করায় পরাজিত প্রার্থী রাজাপুর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মিলন মাহমুদ বাচ্চু ও তার শেল্টারদাতা রাজাপুর আওয়ামী লীগ সভাপতি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে হয়রানি করার জন্য জামাল হোসেন হাওলাদারকে দিয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করিয়ে তাতে আমাকে প্রধান আসামি করেছে। ঘটনার সময় আমি রাজাপুরে অবস্থান করছিলাম যা থানা পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মী সবাই জানেন।
এনএস/
আরও পড়ুন