জয়পুরহাটে চাঞ্চল্যকর ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল
প্রকাশিত : ১০:২৪, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
জয়পুরহাটের আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ইউপি চেয়ারম্যান একে আজাদ হত্যা মামলার ৩ বছর পর আদালতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছনে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার জয়পুরহাটের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট ইকবাল বাহারের আদালতে সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান এই অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসাবে ভাদসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং নিহত চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বী ও বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য এবং ভাদসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাতেম আলী, এজাহার ভুক্ত ১নং আসামি মুন্না পারভেজ, সৈকত হোসেন, আ. হাকিম, সাদ্দাম হোসেন, হাবিব মিয়া, রাজিব হোসেন, শাহিনুর ইসলাম, সাইফুল ইসলাম,আব্দুল আলীম, নাজিম, তৌহিদ হোসেন ও সোহাগ হোসেন।
মামলার অভিযোগ পত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৪ জুন রাত পৌনে ১০টার দিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান একে আজাদ প্রতিবেশী পবিত্র মন্ডলকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে স্থানীয় দূর্গাদহ বাজার থেকে তার নিজ বাড়ি কোচ কুড়িতে যাওয়ার সময় গোপালপুর বাজারের কাছে ওঁত পেতে থাকা আসামী মুন্না পারভেজ ও তার দল একে আজাদের উপর আক্রমণ চালায়। আসামীরা চেয়ারম্যান কে উপর্যূপরী ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
এসময় চেয়ারম্যানকে সাহায্য করতে আসা নয়ন মন্ডল নামে আরো একজন গুলিবিদ্ধ হয়। মামলার সাক্ষীরা আহতকে উদ্ধার করে পুলিশ ভ্যানে করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করায় তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুন ভোরে তার মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই এনামুল হক কাস্মির বাদী হয়ে ৫জুন জয়পুরহাট সদর থানায় ৬জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬/৭জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন জয়পুরহাট সদর থানার পরিদর্শক ফরিদ হোসেন। পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডতে হস্তান্তর হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে।
সিআইডতে বেশ ক’জন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। সব শেষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পরিদর্শক জিয়াউর রহমান। তিনি তদন্তে আসামীদের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের ও জনগনের দেওয়া তথ্যমতে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পান। অভিযোগ পত্রে বলা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আসামী সোহেল রানা ও মনির হোসেন আগেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালে ৩০ মার্চ ইউপি নির্বাচনে নিহত একে আজাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আসামী হাতেম আলী। একে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও হাতেম আলীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু নির্বাচনের সময় হাতেম আলীর নির্দেশে আসামী মুন্না পারভেজ একে আজাদের র্নিাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করেন এবং একে আজাদ তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার ফলে তাকে বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দেয় এরই ধারাবাহিকতায় আজাদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ গ্রহনের পরে আসামী মুন্না পারভেজ, নাজিম, সৈকতরা হাতেম আলীর কাছ থেকে ২লাখ টাকা নিয়ে চেয়ারম্যানকে হত্যা করে। আসামী মুন্না পারভেজ, সৈকতরা ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় জবান বন্দিতে এসব কথা বলেন এবং তার প্রমাণও মেলে। বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন আসামি জামিনে রয়েছে এবং কয়েকজন এখনো পলাতক রয়েছে।
এদিকে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিলের পর নিহতের পরিবার কিছুটা স্বস্তিবোধ করছে। নিহত চেয়ারম্যানের মা সাহারা বেগম জানান, তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে অথচ হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি।
নিহতের ছোট ভাই ভাদসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন জানান, তার ভাই হত্যাকারীর পরিকল্পনাকারী এখনো আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে বহাল রয়েছে। এতবড় খুনের ঘটনায় তারা বহাল তবিয়তে থাকে কি করে। এই অভিযোগ পত্রে তার পরিবার খুশি জানিয়ে বলেন, আদালত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করলে তার পরিবারসহ এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে আসবে।
আরও পড়ুন