ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

`বিশ্বমানবতার কল্যাণে কাজ করাই আমার মূল লক্ষ্য`

আরটিএন মোহাম্মদ ইউসুফ

প্রকাশিত : ২১:১২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৩২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

“সদস্যরাই হলো ক্লাবের প্রাণ। ক্লাবকে উন্নয়ন, শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত করতে সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।তাই আমার রোটারিবর্ষে (২০১৯-২০) ২ শতাংশ মহিলাসহ ১০শতাংশ সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি।রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট মার্ক ডানিয়্যাল বলেন, “ ROTARY CONNECTS THE WORLD.” আমরা এখন বিশ্বগ্রামের বাসিন্দা। তাই, সেবাকার্যক্রম নির্দিষ্টস্থানে সীমিত না রেখে দেশ-বিদেশের মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করে বিশ্বমানবতার কল্যাণে আমি কাজ করে যাবো।

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক-৩২৮২, বাংলাদেশ এর গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি জনকল্যাণে নানান রূপকল্প রচনা করেছি। আমার জেলার ৭টি জোনে ৭টি অ্যাম্বুলেন্সসেবা চালু করা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ সিলেটে একটি রোটারি অরফ্যানেজ গোড়াপত্তনের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে নতুন করে আরও কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষকরে এলাকার সকল রোটারিয়ানদের এক ছাতার নিচে আনতে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে দুটি রোটারি সেন্টার স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।এছাড়া বেশিরভাগ ক্লাবে এল্ডারলি কেয়ার ফান্ড গঠনের কার্যক্রম চলছে।” সম্প্রতি চট্টগ্রামশহরের হোটেল অ্যাম্বাসেডর-এ  দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রোটারি জেলা গভর্নর এম আতাউর রহমান পীর তাঁর একবছরের কর্মপরিকল্পনা কী- এমনএক প্রশ্নের জবাবে উপর্যুক্ত কথাগুলো বলেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর আতাউর রহমান রোটারি ক্লাব অব চিটাগাংয়ের অতীত প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান ডা.মঈনুল ইসলাম মাহমুদের প্রতি অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “ চট্টগ্রামে একটি ক্যানসার হসপিটাল স্থাপনের জন্যে ৫কোটি টাকার জায়গা ও নগদ ৫কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়ে রোটারিয়ান মঈনুল দানশীলতার এক সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আগামী ডিসেম্বরেই প্রস্তাবিত এ হাসপাতালভবন নির্মাণের কাজ শুরুর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

রোটারি ক্লাব অব চিটাগং হিলটাউনের প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান দেবদুলাল ভৌমিকের চট্টগ্রাম রোটারি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগকে(যদিও অতীতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু কাজ হয়নি)কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল কর্নেল (অব.) এম আতাউর রহমান পীর বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।আমি অত্যন্ত আন্তরিকভাবে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সিলেট ও চট্টগ্রামে রোটারি সেন্টার স্থাপনের যে স্বপ্ন আমি লালন করছি এর মাধ্যমে তার আংশিক বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। দেবদুলাল ছাড়াও এ মহতি উদ্যোগের জন্যে রোটারিয়ান সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ পিএইচএফ, রোটারিয়ান মুহাম্মদ মুসলিম, রোটারিয়ান মীর নাজমুল আহসান রবিনসহ কর্নফুলী জোনের সকল প্রেসিডেন্টকে সাধুবাদ জানাই। এছাড়া এ জোনের সকল রোটারিয়ানদের চট্টগ্রাম রোটারি সেন্টার স্থাপানে সাধ্যমতো অবদান রাখার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।


রোটারি একটি আন্তর্জাতিক সেবাধর্মী সংগঠন। এ সংগঠনের মূলমন্ত্র হচ্ছে-নিঃস্বার্থে অন্যের সেবা করা। পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মাধ্যমে বিশ্ব শান্তিস্থাপনের জন্যে রোটারিয়ানেরা কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য, রোগ-শোক, অশিক্ষা-কুশিক্ষা সেখানেই রোটারি ফাউন্ডেশান মানবসভ্যতার জন্যে এসব অমঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ করছে।রোটারেক্ট ক্লাব-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর আতাউর রহমান বলেন, “ বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১হাজার রোটারেক্ট ক্লাব ও প্রায় ২.৫লাখ রোটারেক্টর রয়েছে। ১৮-৩০ বছরের তরুণ-তরুণীদের মাধ্যমে পরিচালিত এ যুবসংগঠন রোটারি ইন্টান্যাশনালের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।রোটারেক্ট ক্লাব থেকে যারা ওঠে আসেন তারা রোটারি কার্যক্রমে অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখেন। কোনো কোনো রোটারি ক্লাবের ৪/৫টা পর্যন্ত রোটারেক্ট ক্লাব থাকে। একাধিক রোটারেক্ট ক্লাব পরিচালনা করা খুবই কঠিন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্যে অতিরিক্ত রোটারেক্ট ক্লাব স্থাপন করা সমীচীন নয়।”


দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সিলেট মদনমোহন কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল, রোটারি গভর্নর আতাউর রহমান পীরের সাথে আলোচনা হয়।মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন রাখলে তিনি কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “দেশের টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।তবে শিক্ষা নিয়ে দেশে রাজনীতি চলছে।দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে রাজনীতি থেকে শিক্ষাকে আলাদা করে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।”


উল্লেখ্য, আতাউর রহমান পীর সাদাসিধে ও খোলামনের এক অসাধারণ মানুষ। সদা হাস্যোজ্জ্বল মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এ মহৎ ব্যক্তি জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত জনকল্যাণে ব্যয় করছেন। নিজের কথা না ভেবে অর্থাৎ আত্মচিন্তায় বিভোর না থেকে মানবতার কল্যাণে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।সকলপ্রকার কলুষ,হীনতা, সংকীর্ণতা ও ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে ওঠে তিনি মানুষের বৃহত্তর কল্যাণসাধনে আত্মনিয়োগ করেন। ধর্মের প্রতি বিশাল অনুরাগ থাকলেও মনেপ্রাণে তিনি অসাম্প্রদায়িক।তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, “ নিজের স্বার্থের জন্যে কেবল জীবন নয়। সকলের সাথে মিলেমিশে জীবনধারণ ও সুখে-দুখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা নিহিত।”


আতাউর রহমান পীর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পীরপরিবারের সন্তান। ১৯৫১ সালে তিনি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মরমি কবি ও বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন শাহ আছদ আলী পীর (রহ.) এর প্রপৌত্র ও স্বনামধন্য শিক্ষক মরহুম আব্দুল মান্নান পীর এবং আইয়ুবুন্নেছা খাতুনের জ্যেষ্ঠপুত্র।১৯৬৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৮ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৭১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে রসায়নবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বিদ্যালয় থেকে রসায়নবিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ময়মনসিংহের আঠারবাড়ি কলেজ ও গৌরীপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে সিলেট মদনমোহন কলেজে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করে ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রিন্সিপাল হিসেবে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে ২০১০ সালে অবসরগ্রহণ করেন।


আতাউর রহমান ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর-এ অফিসার হিসেবে যোগদান করে ২০০৬ সালে লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। বিএনসিসি ২ ময়নামতি কমান্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্বপালনের পর ২০১০ সালে অবসরে যান।
শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আতাউর রহমান পীর বিভিন্ন সংগঠন থেকে সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত হন।২০০২ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক সম্মাননা ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। এছাড়া ২০০৬ সালে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ স্কাউট কমিশনার হিসেবে তাঁকে সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়।

শিক্ষকতার পাশাপাশি আতাউর রহমান রোটারি আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।তিনি ১৯৯৭-৯৮ রোটারিবর্ষে রোটারি ক্লাব জালালাবাদ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং সেই বছর শ্রেষ্ঠ সভাপতি হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯৯-২০০০ রোটাবর্ষে তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নর এবং পরবর্তীতে ডেপুটি গভর্নর, জেলা সেক্রেটারি, এডিশনাল ট্রেইনার, চেয়ারম্যান, গ্র্যান্ট ম্যানেজমেন্ট সেমিনার, চেয়ারম্যান, জেলা কনফারেন্সসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

আতাউর রহমান দু’পুত্র সন্তানের জনক। তাঁর সহধর্মিনী একজন স্কুলশিক্ষিকা। বড়ছেলে রানা এম এল রহমান পীর ও ছোটছেলে রুমেল এম এস রহমান পীর বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে দেশের প্রথিতযশা দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।বড় পুত্রবধূ বিলকিস সুলতানা এমবিবিএস ডাক্তার ও ছোট পুত্রবধূ এম এ, এমবিএ। মেয়ে নাবিলা মাহজাবিন রিয়া কলেজে লেখাপড়া করছে।

আতাউর রহমান অবসরে লেখালেখি ও জ্ঞানসাধনা করে সময় কাটান।তিনি দ্যা ক্রিড অব ইসলাম (অনুবাদ), কালজয়ী জীবনাদর্শ (প্রবন্ধ), জেনারেল ওসমানী (সম্পাদিত), সুখের সন্ধানে (প্রবন্ধ), রাহমাতুল্লিল আলামীন (জীবনীগ্রন্থ) Rotary: Making A Differenceসহ ১৫টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও সামfজিক সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি