ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জোরালো হচ্ছে জাবি ভিসির পদত্যাগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১১:৩৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই সমালোচিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সম্প্রতি পদও হারাতে হয়েছে তাদের। একই অভিযোগের দায়

একই অভিযোগ উঠেছে,  বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধেও। যদিও এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন উপাচার্য। তবে রাব্বানী ও শাখা ছাত্রলীগের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ও এরপর জাবি শাখা ছাত্রলীগদের বক্তব্যে ফাঁস হওয়ার পর দেশজুড়ে জাবির উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সারাদেশের মানুষ চায় তিনি স্বেচ্ছায় তার পদ সরে যাক। অনেকেই অভিযোগ তুলছে, যে অপরাধের দায়ে ছাত্রলীগে সভাপতি ও  সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তবে জাবির ভিসির বিরুদ্ধে নেওয়া হবে না কেন।

তবে ইতোমধ্যেই সোমবার বিকালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বীকার করেছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম তাদের টাকা দেওয়ার বিষয়ে। তিনি জানিয়েছেন, ‘ফাঁস হওয়া ফোনালাপে আলোচিত ১ কোটি টাকা শাখা ছাত্রলীগকে ঈদ সালামি হিসেবে দিয়েছেন ভিসি ফারজানা ইসলাম। এটি অস্বীকার করার কিছুই নেই।’

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ভিসির বাসায় মিটিংয়ে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়, আমাদের ঈদ সালামি বাবদ টাকা দেবে। সেখানে আমাদের ১ কোটি টাকা ঈদ সালামি দেওয়ার কথা হয়। পরদিন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল ও ছাত্রলীগ সম্পাদক চঞ্চলের কাছে ১ কোটি টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা (সাদ্দাম গ্রুপ) চঞ্চলের কাছ থেকে ভাগের টাকা বুঝে নেই। তবে ভিসি কোথা থেকে এই টাকা আমাদের দিয়েছেন তা আমরা জানি না। ১কোটি টাকা ঈদ সালামি পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি বলেও জানান সাদ্দাম হোসেন।

অন্য দিকে দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ঈদের আগে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছ থেকে ছাত্রলীগ ১ কোটি টাকা সালামি পেয়েছে বলে সংগঠনটির একাধিক নেতা স্বীকার করেছেন।

জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ ওই ১ কোটি টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগে এক কোটি টাকার চাঁদা থেকে আমি ও সাদ্দাম (জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক) ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছি।

তিনি বলেন, এ টাকা আমরা কীভাবে পেয়েছি, সেটা জানি; কিন্তু বাকি টাকার কারা কত পেয়েছে, তা জানি না। এখন যেহেতু প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই এটা তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসন কত টাকার দুর্নীতি করেছে, তা প্রমাণ হওয়া উচিত।       

এর আগে সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই দুর্নীতির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ।

এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা (তাজ ও সাদ্দাম) ২৫ লাখ নিবা, জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ২৫ লাখ নিবে আর সভাপতি মো জুয়েল রানা ৫০ লাখ নিবে। আমরা আমাদেরটা পেয়েছি। তবে অপ্রকাশ্যে এর বেশি কে কত পেয়েছে, তা আমরা জানি না। কেউ এর বেশিও পেতে পারে।’

যদিও ফাঁস হওয়া কথোপকথনে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়।

তবে তাদের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা আবারও স্বীকার করেন।    

অন্য দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, সুষ্ঠু তদন্ত হলে উপাচার্য ও তার পরিবার দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাবেন। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়- উপাচার্যের মধ্যস্থতায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। এরপর উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলনে নামেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এরই মধ্যে গত শনিবার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ থেকে কয়েক শতাংশ চাঁদা দাবির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি পদ থেকে রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়। 

তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে শোভন ও রাব্বানী দাবি করেছেন, জাবির একটি টেন্ডারের ভাগ হিসেবে শাখা ছাত্রলীগকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওই চাঁদাবাজির সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

তাদের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ‘তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ (টাকা) নেওয়ার বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে এ বিষয়ে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

তবে উপাচার্য বিষয়টিকে মিথ্যাচার বলে প্রত্যাখ্যান করলেও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও শাখা ছাত্রলীগের নেতার ফোনালাপে স্পষ্ট উঠে আসে উপাচার্য ফারজানা ইসলামই কে কত টাকা পাবেন বাসভবনে বৈঠক করে তা ঠিক করে দিয়েছেন। 

ফোনালাপে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম কথোপকথনে বলেছেন, ‘কে কত টাকা পাবে তা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বাসভবনে বৈঠক করে ঠিক করে দিয়েছেন।’

আরেক নেতা সহসভাপতি নিয়ামুল হক তাজও একই দাবি করেছেন। তারা দুজনেই দাবি করেন, শাখা সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে তারা নিজেরাও সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং টাকার ভাগও পেয়েছেন। 

উপাচার্যের ছেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কমিশনের বাণিজ্য করেছেন এমনটাও দাবি করেন এই দুই নেতা। এ নিয়ে ত্রিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও  উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। নিজেরা টাকার ভাগ পেয়েছেন এমন কথা দুই নেতা স্বীকার করলেও শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তা অস্বীকার করছেন।

অন্য দিকে ফোনালাপের বিষয়টিকে বানোয়াট বলে দাবি করে জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, তারা ফোনালাপ করছে, ফোনালাপ বানিয়েছে। আমার ছেলে তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলাপ করেনি। এখানে শিক্ষকদের ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে জাবি ভিসি বলেন, তবে কারা সেটা আমি বলব না। 

অন্য দিকে ভিসিপন্থি শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের দাবি, ফাঁসকৃত ফোনালাপ জাবি ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী ‘ষড়যন্ত্র’। পাশাপাশি ফোনালাপকে ‘মিথ্যাচার’দাবি করে সবাইকে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সমর্থন এবং অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনংসযোগ অফিস।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দুর্নীতি উন্মোচন ও এর বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। তবে প্রকৃত ঘটনা তদন্তের ফলে বেরিয়ে আসুক এমনটাই বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থি শিক্ষক, ছাত্রলীগের একাংশ, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘কেউ বলছে টাকা পেয়েছে। আবার কেউ অস্বীকার করছে। আসলে কারা টাকা পেয়েছে আর কারা টাকা পায়নি বা টাকা দেওয়া হয়েছে কি না এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়ার অবসানের জন্য তদন্ত কমিটি হতে পারে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই।’

এ বিষয়ে উপাচার্যপন্থি শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি উপাচার্য এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত না। তিনি চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত করেছেন। সবাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। আমরা এর অবসানের জন্য সুষ্ঠু তদন্ত হোক এমনটাই চাই।’

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘তদন্ত কমিটির ওপর ভরসা করা যায় না। সরকার যদি চায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তবে এক ধরনের তদন্ত হবে। আর যদি চায় আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে তবে অন্যরকম তদন্ত হবে। এ জন্য বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

পদত্যাগ করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ‘আনীত অভিযোগ কতটা ষড়যন্ত্রমূলক আর অতিরঞ্জিত, সময় ঠিক বলে দেবে।’

অন্য দিকে অভিযোগের বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন কোনো কথা না বললেও এ বিষয়ে কথা বলেন তার বাবা কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী চৌধুরী। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্প থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে অর্থ দাবি প্রসঙ্গে শোভনের বাবা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছি, জাবির ব্যাপারে আসলে শোভন কিছুই জানে না। ঘটনাস্থলে ওইদিন শোভন ছিল না। সেখানে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেন সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক হয়। রাব্বানীরা তাকে পরে ডেকে নিয়ে যায়। শোভন উদ্ভূত পরিস্থিতি মীমাংসার জন্য সরল বিশ্বাসে সেখানে গিয়েছিল। অথচ অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাকে ফাঁসানো হলো। আমার ছেলেকে নিয়ে যে আর্থিক বিষয়গুলো বলা হচ্ছে, সেটা তার দ্বারা সম্ভব নয়। সে পরিস্থিতির শিকার, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

নূরুন্নবী চৌধুরী আরও বলেন, জাবি ভিসির সঙ্গে কথা বলার সময় গোলাম রাব্বানী যেহেতু একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, সেখানে শোভন উপস্থিত থাকায় হয়তো তার নামও এসেছে। কিন্তু রাব্বানী নিজেই বলেছে, শোভন কিছু জানে না। এমনটাই বলেন শোভনের বাবা।     

অন্য দিকে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জাবি উপাচার্যও কোনো আইনের ঊর্ধ্বে নন বলে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, তদন্তে যদি তার কোনো অপকর্মে সংশ্লিষ্টতা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি (জাবি ভিসি) কোনো অন্যায় করে থাকলে ছাড় পাবেন না।  

এ দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেতে পারেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি (ইউজিসি)। এ জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কমিশন বাণিজ্যের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের দেওয়া লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। এ জন্য ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে।

তিনি বলেন, দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হবে। তদন্ত শেষে কমিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হবে। অপরাধের প্রমাণ মিললে উপাচার্যের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কমিশন কেলেঙ্কারির ঘটনায় জাবি উপাচার্য দায় এড়াতে পারেন না। একজন উপাচার্যের কাছে ছাত্রনেতারা কীভাবে কমিশন দাবির সাহস পায়, এ বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গেই বা উপাচার্য কীভাবে বৈঠক করে। এটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ অপরাধে জন্য সবাই জাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, জাবির উপাচার্যের বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি গোপনভাবে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। এতে অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখতে ইউজিসিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করাও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগ খুবই গুরুতর, তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। অভিযোগের সত্যতা মিললে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন বলেন, কমিশন আদায়ের বিষয়টি নিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কেউ কেউ উপাচার্যের এমন ঘটনা মেনে নিতে পারছে না, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তবে এ নিয়ে একাডেমি কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি।


টিআর/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি