রাউক’র সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকাশিত : ২৩:৫২, ২ অক্টোবর ২০১৯
জালিয়াতি করে আটটি প্লট বরাদ্দের ঘটনায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাউক) সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে বুধবার মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল আমিন মামলাটি দায়ের করেছেন। দীর্ঘ ১৪ বছর আগের এ দুর্নীতির বিষয়ে চারজন অনুসন্ধান কর্মকর্তার তদন্ত শেষে গত সোমবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।
মামলায় আসামিরা হলেন, রাউক’র সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাব রক্ষক রুস্তুম আলী, উচ্চমান সহকারী মোস্তাক আহমেদ, প্লট গ্রহীতা এনামুল হক, আবু রায়হান শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এসএম খোদেজা নাহার বেগম, ডা. রবিউল ইসলাম স্বপন, মাহফুজুল হক ও খায়রুল আলম। আরেক প্লট গ্রহীতা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম আকন্দ ২০১৮ সালে মারা যাওয়ায় তার নাম আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী ও সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, প্লটের সাত ক্রেতা রাউক’র কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে প্লটগুলো বরাদ্দ নিয়ে তারাও অপরাধ করেছেন। আর অনৈতিক সুবিধা এবং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে রাউক’র কর্মকর্তারাও অপরাধ করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা করা হয়েছে।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ৫ দশমিক ৯০ থেকে ৮ দশমিক ২৩ কাঠার আটটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দে ২০০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ মান্নানের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রতি কাঠা জমির মূল্য ২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ওই আটটি প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। পরে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে রাউক’র পরবর্তী চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার প্লটগুলোর বাজার দর পুন:নির্ধারণ না করেই দু’বছর আগের মূল্যেই দরপত্র আহবানের কার্যক্রম শুরু করেন।
এর ধারাবাহিকতায় স্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক ‘দৈনিক নতুন প্রভাত’ নামের স্থানীয় একটি পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রচারের জন্য ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চিঠি পাঠানো দেখান। আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনটি ছাপানো হয়েছে দেখানো হয় ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু দৈনিক নতুন প্রভাত পত্রিকায় কোনও দিনই বিজ্ঞাপনটি ছাপানো হয়নি। আবার কমপক্ষে একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার বিধান থাকলেও তারা শুধুমাত্র স্থানীয় একটি পত্রিকায় ভুয়াভাবে বিজ্ঞাপন ছাপানো দেখিয়ে দরপত্রের কার্যক্রম শুরু করেন।
অথচ নতুন প্রভাত কর্তৃপক্ষ দুদককে জানিয়েছে, তারা বিজ্ঞাপন ছাপাননি এবং কোনো বিলও গ্রহণ করেননি। প্রমাণ হিসেবে ওই তারিখের পত্রিকার একটি পূর্ণাঙ্গ কপি দুদকে সরবরাহ করা হয়। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্লট বরাদ্দ করতে জালিয়াতি করে অফিসের রেকর্ডপত্র ঠিক রাখা হয়।
দুদক আরও জানায়, তৎকালীন রাউক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার অন্যদের সাথে যোগসাজস করে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়াকে গোপন করেন। ফলে আগে থেকেই নির্ধারিত শুধু সাতজন ব্যক্তি আটটি প্লটের জন্য আবেদন করেন। এরপর আটটি দরপত্র যাচাই বাছাই করে দরপত্র ওপেনিং কমিটির সদস্য এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক রুস্তম আলী ও তখনকার নিম্নমান সহকারী মোস্তাক আহমেদ ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় উপস্থাপন দেখান।
আর রাউক’র চেয়ারম্যান তা অনুমোদন করেন। এ দিন দরদাতাদের অনুকূলে অবৈধভাবে বরাদ্দপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্তও দেন চেয়ারম্যান। অথচ ওই তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি তোলাই হয়নি। সেদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন তখনকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মুনির হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক সচিব কোরবান আলী ও রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ।
তারা দুদককে জানান, আটটি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত কোনও এজেন্ডা ওই সভায় ছিল না এবং এ বিষয়ে কোনও আলোচনাও হয়নি। তারপরেও প্লট বরাদ্দের বিষয়টি জানতে পেরে তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে ২০০৬ সালের ৩ মার্চ জেলা প্রশাসককে লিখিত প্রতিবেদন দেন। এরপর দুদক প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি সংগ্রহ করে অনুসন্ধান শুরু করে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে দুদক প্রমাণ পায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৫০ দশমিক ৬৭ কাঠা জমি অবৈধভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে।
এমএস/এনএস
আরও পড়ুন