ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বঙ্গোপসাগরে ভিনদেশিদের উপদ্রব, দু’দিনে আটক ৩৮

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ২০:৫৫, ৪ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ২১:২৮, ৪ অক্টোবর ২০১৯

সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের উপদ্রব বেড়েই চলেছে। এসব বিদেশী জেলেদের অনুপ্রবেশের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের জেলেরা। 

স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশি জেলেদের মাছ শিকার ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে গত দু’দিনে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রলারসহ ৩৮ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। মোংলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী এ তথ্য জানান।
 
তিনি বলেন, শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ২৩ জন ভারতীয় জেলেকে মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবারও (১ অক্টোবর) ১৫ জন জেলেকে বঙ্গোপসাগরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অপরাধে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
 
মোংলা বাজারের স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী রবিউল, আল আমিন ও জসিম অভিযোগ করে জানান, ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশী জেলেদের বর্তমান ইলিশ মৌসুমে মাছ শিকার ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

 
তারা আরও বলেন, একসময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঘেষে বা কিছুটা ভিতরে ঢুকে ইলিশ শিকার করতো। বর্তমানে উপকুলীয় এলাকার কাছাকাছি এসে অবাধে মাছ শিকার করছে। অধিকাংশ সময়ই তারা গোপনে মাছ শিকার করে চলে যায়। বিদেশী জেলেরা উচ্চতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে ট্রলারে বসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর তৎপরাতায় চোখ রাখে। 

সুত্র জানায়, বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকার কাছে হওয়ায় সেখানকার বিপুল সংখ্যক জেলে এদেশের জলসীমায় মাছ ধরতে আসে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশি জেলেরা বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায়  ট্রলার ও নৌকায় করে সামুদ্রিক নানা ধরনের মাছ আহরণ করে থাকেন। সমুদ্র শান্ত থাকায় এ সময়টা জেলেদের মাছ আহরণের উপযুক্ত মৌসুম। 

দেশীয় জলসীমায় সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বেশি তাই এ সময়টাই মাছ লুণ্ঠনের টার্গেট থাকে ভীনদেশী জেলেদের। আর সেই সুযোগ বুঝোই প্রতিবেশী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলার মাছ ধরার উপকরন নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে। তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে এবং নৌবাহিনী আসতে দেখলেই দ্রুত পালিয়ে যায়।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দপ্তর) অপারেশন কর্তকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, ‘দেশীয় জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরেতে পারে। আর ভারতীয়  দেশীয় সমুদ্রসীমার প্রায় দেড়শ' কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। তারা দ্রুতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ  জিপিএস  নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এসব জেলেদের ধরতে নৌ বাহিনীর পাশাপাশি তারাও সাগরে অভিযান অব্যাহত রেখেছে’। 

মোংলা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোঃ ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সমুদ্রসীমা লংঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত আটক জেলেদের সবাই ভারতীয় নাগরিক। সর্বশেষ আজ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুই দিনের ব্যাবধানে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অপরাধে এফ বি স্বর্ণদ্বীপ ও এফবি আমৃতে নামে দুটি ফিশিং ট্রলারসহ ২৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা। এর আগে গত বুধবার (১ অক্টোবর) একইভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের সময় ভারতীয় এফ বি মা লক্ষী নামে একটি ফিশিং ট্রলারসহ ১৫ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয়। আটকরা সবাই ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। 

তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ২২ ধারায় মামলা দায়ের শেষে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনিি জানান। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি