মোংলায় কার্ড থাকলেও ত্রাণ সহায়তা পায়নি জেলেরা
প্রকাশিত : ১১:৩৯, ১৪ অক্টোবর ২০১৯
চলতি ইলিশ প্রজনন মৌসুমে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে নদীতে জাল ফেলতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন সুন্দরবন উপকূলের লক্ষাধিক জেলে পরিবার। এসব জেলের অনেকেরই বিকল্প আয়ের ব্যাবস্থা না থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এখন পরিবার নিয়ে জীবিকা চালাতে কষ্টসাধ্য হচ্ছে বলে জানান জেলেরা। ইলিশ অবরোধে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও, তা খুবই সামান্য বলেও জেলেরা জানান। তবে সে কথা স্বীকারও করেছেন স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান।
এদিকে, অনেক জেলের ‘জেলে কার্ড’ থাকলেও তারা ত্রাণ হিসেবে ভিজিএফের চাল পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে তাদের ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, তারা নিবন্ধিত না, তাই হয়তো চাল পাননি। এসব জেলেরা যাতে নিবন্ধিত হয় সে জন্য তাদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
রোববার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিনে মোংলা উপজেলার সুন্দরবন উপকূলের চিলা, জয়মনি, চরকানা ও বুড়িরডাঙ্গা এলাকায় কথা হয় জেলে শংকর গাইন, আবু বকর, বিদ্যুৎ মন্ডল, লিয়াকত আলী, ইসমাইল সরদারসহ একাধিক জেলেদের সঙ্গে।
সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা ও পশুর নদীতে ইলিশ মাছ ধরেন এসব জেলেরা। এ সময় তারা বলেন, আমাদের উপজেলায় জেলে আছে প্রায় ১০ হাজার। এদের মধ্যে চলতি ইলিশ প্রজনন মৌসুমের অবরোধে মাত্র ৩৬২ জনকে সরকারি ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। সামান্য এ চাল দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে ২২ দিন চলবে?
উপজেলার চরকানার জেলে আবু বকর ও চিলা এলাকার শংকর গাইন বলেন, আমাদের মতো কয়েক হাজার জেলেদের ‘জেলে কার্ড’ আছে কিন্তু আমরা কোনো ত্রাণ সহায়তাই পায়নি। বারো মাস নদীতে মাছ ধরে খাই, এখন কিভাবে সংসার চালাবো, খুবই কষ্টে আছি।
জানতে চাইলে মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় ছয় হাজার ৫’শ জন জেলে নিবন্ধিত আছেন। এদের মধ্যে ৩৬২ জন জেলেদের ভিজিএফের মাধ্যমে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বাকি জেলেদের পর্যায়ক্রমে ভিজিএফের আওতায় এনে ত্রাণ সহায়তা দিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে’।
জেলেদের ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি চাল খুবই সামান্য স্বীকার করে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘জেলেদের জন্য চাল বেশি বরাদ্দ এবং একাধিকবার যেন এই চাল দেওয়া হয়, সরকারের কাছে সে প্রস্তাব করা হয়েছে’।
গত ৯ অক্টোবর থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন বন্ধ আছে নদী ও সাগরে ইলিশ আহরণ ও বিক্রি। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।
জানা যায়, উপকূলীয় নদ-নদীতে এসে মা ইলিশ মূলত সারা বছরই প্রজনন ঘটায়। আর তাই মা ইলিশ যেন নির্বিঘ্নে মিঠা পানিতে এসে প্রজনন ঘটাতে পারে সেজন্য পূর্ণিমার আগে চারদিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে।
নিষিদ্ধ এ সময়ে ইলিশ ধরা, পরিবহন, গুদামজাতকরণ কিংবা বিক্রি সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।
মোংলা উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড তৌহিদুর রহমান আরো জানান, নিষেধাজ্ঞার এ আদেশ অমান্য করলে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা অথবা উভয়দণ্ড পেতে হবে। নিষিদ্ধের এই সময় কঠোর অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আই/
আরও পড়ুন