বেনাপোলে বন্ধ করে দেওয়া হলো পৌর টোল
প্রকাশিত : ২০:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৯
ট্রাক মালিক সমিতি ও বন্দর ব্যবহারকারী ৭টি সংগঠনের ধর্মঘটের হুমকির মুখে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বেনাপোল পৌর সভার অবৈধ ও জোর করে আদায় করা যানবাহনের পৌর টোল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে কোন টোল আদায় করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। তাদের সাফ জবাব এসব ট্রাক পৌর সভার কোন সড়ক ব্যবহার করে না। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়ের সড়ক ব্যবহার করে তারা। সে ক্ষেত্রে পৌর সভা এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় করতে পারে না।
অপরদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি টোল আদায় ইজারা নিয়ম মেনেই দেয়া হয়েছে। বৈধ ইজারাদার টোল আদায় করছে। পুলিশ টোল আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্ব ঘোষণা কিংবা নোটিশ ছাড়াই বৈধ ঠিকাদারকে টোল আদায়ে বাধা দেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অনৈতিক। পুলিশ ওই রাতেই টোল আদায় বন্ধ করে দেয়। এ প্রসঙ্গে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান ঠিকাদারকে জানিয়েছেন, ডিসি ও এসপির মৌখিক নির্দেশে টোল আদায় বন্ধ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০০৬ সালে বেনাপোল পৌরসভা গঠিত হয়। ২০০৭ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন বেনাপোল হাট বাজার, ট্রাক ও পরিবহন টোল ইজারা দেন। সেই থেকে ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে পৌর টোল আদায় করা হয়। ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচিত পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও পূর্বের ধারাবাহিকতায় ট্রাক ও যানবাহনের টোল আদায় অব্যাহত রাখেন।
এদিকে সরকার এক নির্দেশে যানজট সৃস্টি করে মহাসড়কে কোন টোল আদায় করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেনাপোল স্থলবন্দরে ‘স্থলবন্দর উপদেষ্টা কমিটি’র বৈঠকে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী সড়কের উপরে পৌর টোল আদায় বন্ধ করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, যশোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ১ অক্টোবর যশোর জেলার (ঝিকরগাছা,শার্শা ও বেনাপোল ট্রাক ট্যাংকলরী (দাহ্য পদার্থ বহনকারী ব্যতীত) ট্রাক্টর ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি’র নেতৃবৃন্দের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর টোল আদায় বন্ধে একটি স্মারক লিপি পেশ করেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয় মন্ত্রীর আশ্বাসে ঐ সভায় উপস্থিত ট্রাক মালিক নেতৃবৃন্দ খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু সেই নির্দেশনায় বেনাপোল পৌর কর্তৃক অবৈধ টোল আদায় বন্ধ করেনি। পরবর্তীতে ১৩ অক্টোবর বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতির কার্যালয়ে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে এক জরুরী সভা করে বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় তারা।
এ খবর জানতে পেরে বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে শার্শা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে জরুরি এক আলোচনা সভায় যশোর-১ (শার্শা) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন যশোর-বেনাপোল হাইওয়ে সড়কের উপর বিরাজমান যানজট সৃষ্টি করে সকল ধরণের চাঁদাবাজি বন্ধের আশ্বাস দিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় ৭টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সমন্বয় পরিষদ।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূলক কুমার মন্ডলের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, নাভারণ সার্কেল এএসপি জুয়েল ইমরান, শার্শা-বেনাপোল-ঝিকরগাছা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আলহাজ সামছুর রহমান, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শার্শা-বেনাপোল-ঝিকরগাছা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ, বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী, বেনাপোল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ মনিরুজ্জামান ঘেনা, সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান শাহীনসহ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন, বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ এসোসিয়েশন, বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি, বেনাপোল স্থল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন-৯২৫ ও ৮৯১, যশোর জেলা (ঝিকরগাছা-শার্শা ও বেনাপোল) ট্রাক, ট্রাঙ্কলরী, ট্রাক্টর ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও বেনাপোল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে বেনাপোল পৌরসভার সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ম মেনেই ট্রাক টোল আদায়ের ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পর্যাপ্ত রাজস্ব আয় না থাকায় হাটবাজার, ট্রাক, পরিবহন ও অন্যান্য খাতের ইজারা বাবদ আদায়কৃত অর্থ দিয়ে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতার সিংহভাগ পরিশোধ করা হয়। ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচিত পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটনও পূর্বের ধারাবাহিকতায় টেন্ডারের মাধ্যমে বেনাপোল হাটবাজার, ট্রাক ও পরিবহন টোল ইজারা চালু রেখেছেন। পৌরসভার টেন্ডার অনুযায়ী ট্রাক টোল আদায়ে ইজারা পান আকুল হোসাইন।
উল্লেখ্য প্রতিদিন ৩শ‘ থেকে সাড়ে তিনশ‘ বিভিন্ন যানবাহন বেনাপোলে প্রবেশ করে পণ্য ও যাত্রী বহনে। প্রতিটি যানবাহন থেকে ৮০ টাকা করে টোল আদায় করতো পৌরসভার ইজারাদার। প্রতি মাসে টোল আদায় হতো ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।
আরকে//
আরও পড়ুন