নাটোরে দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ গ্রেফতার
প্রকাশিত : ১৮:৩৫, ২০ অক্টোবর ২০১৯
গ্রেফতারকৃত নাটোরের দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ
নাটোরে নারী ও শিশুসহ ৮ হত্যা মামলার মূল হোতা দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নাটোর শহরের রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রোববার সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাবু শেখকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার।
তাকে গ্রেফতারের পর লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় জোড়া খুনের হত্যা মামলার তদন্তে উঠে আসে দুর্ধষ কিলার বাবু শেখের নানা খুনের কাহিনী।
ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার পিপিএম বলেন, গত ৮ অক্টোবর রাতে নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলায় পরপর দুই নারীকে হত্যা করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় একদল চোর। এ ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা দায়েরের পর মাঠে নামে পুলিশ।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় প্রথমে নাটোরের সিংড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় রুবেল আলী (২৩) নামের একজনকে। তার দেয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় নাটোর শহরের স্বর্ণকার লিটন খাঁ'কে। এরপর তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী আসাদুল ইসলামকে (৩৬) গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই দুই হত্যার সঙ্গেই জড়িত বাবু শেখ ও রুবেল। যার প্রেক্ষিতে শনিবার রাতে বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাবু শেখ একজন দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার। সে নাটোর, টাঙ্গাইল ও নওঁগায় ৭ নারীকে হত্যা করেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সময় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছে সে। এমনকি প্রত্যেককে সে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। জেলের (মৎস্য শিকারীর) বেশ ধারণ করে সে এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
তাকে গ্রেফতারের পর সে নাটোরের ৬ নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। যে বাড়িতে পুরুষ সদস্য কম সেই বাড়ি টার্গেট করে হানা দিয়ে নারী সদস্যকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিত।
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা পিপিএম (বার) বলেন, গ্রেফতারকৃত বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে কালু নওগাঁ জেলার রানীনগর থানার হরিশপুর গ্রামের মৃত জাহের আলীর ছেলে।
তিনি আরও বলেন, বাবু শেখকে ধরার আগে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- সিংড়ার রুবেল আলী (২২) ও নাটোর শহরের লালবাজার স্বর্ণপট্টির স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিটন খাঁ (৩০) ও স্টেশন বাজার এলাকার আাসাদুল (৩৬)। এই তিনজনের মধ্যে আসাদুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে কালুকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর বাবু শেখের দেয়া স্বীকারোক্তির পর নাটোর, টাঙ্গাইল ও নওঁগার ৮ নারী হত্যা ও ধর্ষণ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়। সবকটি হত্যাকাণ্ডই সে ঘটিয়েছে। শুধু নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিতেই বেছে নেয়া হয় যে বাড়িতে পুরুষ সদস্য কম সেই বাড়ি। নদী-নালা-খাল-বিল সংলগ্ন এসব বাড়িতে হানা দেওয়ার আগে জেলের (মৎস্য শিকারীর) বেশ ধরে রেকি করতো সে। পরে রাতে হানা দিয়ে শ্বাসরোধ করে নারী সদস্যকে হত্যা করে তার কাছে বা ঘরে মজুদ স্বর্ণালঙ্কার এবং নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়তো সে। ফলে ঘটনাটি চুরির বলেই ধারণা করা হতো।
কিন্তু গত ৮ অক্টোবর বড়াল নদীর দুপারের গ্রাম নাটোরের লালপুর উপজেলার চংধুপইল গ্রামে নারী আনসার সদস্য সাবিনা পারভিন ওরফে সাহেরাকে (৩২) হত্যা করে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, মোবাইল ফোন এবং একই রাতে বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তিপুর গ্রামের রেহেনা বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যা করে ১৬ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজন রুবেল আলীকে গ্রেফতারের পর ৮ হত্যা মামলার রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাই স্বর্ণ ক্রেতা ব্যবসায়ী লিটন খাঁকে আটক করা হয়। এরপরে আটক আসাদুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় দুর্ধষ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে।
ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার পিপিএম বলেন, দুধর্ষ কিলার বাবু শেখকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে ৮টি মামলার সব ক’টিতেই বিচার করা সম্ভব হবে।
এ প্রেস ব্রিফিংয়ে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বড়াইগ্রাম সার্কেল হারুন-অর রশিদ, ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এনএস/
আরও পড়ুন