নুসরাত হত্যা: কী হবে ওসি মোয়াজ্জেমের?
প্রকাশিত : ১৬:৫১, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামী অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে আসামিদের উপস্থিতিতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ।
নুসরাত হত্যার প্ররোচনাদানকারী হিসেবে অভিযুক্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক তৎকালীন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এখন কারাগারে। নুসরাত হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি হয়েছে, তাহলে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের কী হবে?-এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।
বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির আদেশের সঙ্গে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেমসহ চার পুলিশের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
দেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে স্বল্প সময়ে কোনো মামলা নিষ্পত্তির ঘটনা। এর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালেও তা সম্ভব হয়নি।
নুসরাত হত্যা মামলার ৮০৮ পৃষ্ঠার রায়ে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে থানায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করতে আসেন নুসরাত। সেসময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে জবানবন্দি ভিডিও করা ও তা সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তৎকালীন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম।
বিচার চাইতে এসে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ৮ মে ওসি মোয়াজ্জেমসহ দুই এসআইকে বহিষ্কার করা হয়। আর দায়িত্ব অবহেলায় ১৩ মে ফেনীর তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলমকে প্রত্যাহার করা হয়।
৬ এপ্রিল নুসরাত হত্যার জন্য ওসির এ ভূমিকাকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। ২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৬ জুন মোয়াজ্জেমকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ আনা হয়।
এগুলো হলো- মামলার কালক্ষেপণ, এজহার নিয়ে কূটচাল, গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের নাম বাদ, নুসরাতকে থানায় জবানবন্দির নামে ওসির হেনস্তা, আইনি বহির্ভূত জিজ্ঞাসাবাদ, প্রথমে অজ্ঞাত মামলার পরে ৮ জনের নামোল্লেখ।
এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তারা মূলত ওসি মোয়াজ্জেমের কারণে এ জঘন্য কাজ করার সাহস পেয়েছিল। আমি খুশি হতাম যদি ওসি মোয়াজ্জেমকেও এ মামলায় যুক্ত করা হতো।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার শুনানি অনেকটা এগিয়েছে। আশা করছি সামনের মাসে রায় ঘোষণার পর্যায়ে যাবে। ওই রায়ে যদি মোয়াজ্জেমের সাজা নিশ্চিত করা যায়, তবেই হয়তো নুসরাতের আত্মা পরিপূর্ণভাবে শান্তি পাবে।
সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, এ রায়ের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে অপরাধী যারাই হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় আসতেই হবে। বিচার তাদের হবেই। শুধু নুসরাত নয়, এমনিভাবে আবরার হত্যার বিচার করতে পারলে দেশের মানুষ অপরাধ করতে ভয় পাবে। নুসরাত হত্যার এ রায় হাইকোর্টে বহাল থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সুমন।
আই/এসি
আরও পড়ুন