নুসরাত হত্যার রায়ে কাঁদলেন বাবা
প্রকাশিত : ১৮:২৮, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল আসামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ ১৬ জন আসামীর সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা ও নুসরাতের বড় ভাই নোমান। তারা এ রায় ঘোষণার সময় এজলাস কক্ষেই কেঁদে ওঠেন।
বাবা পেয়েছেন মেয়ে হত্যার রায় আর ভাই পেয়েছেন বোন হত্যার রায়। তারা সন্তুষ্ট কিন্তু মেয়ে বা বোন হারানোর ব্যথা তারা ভুলতে পারছেন না। তাদের বুকের ভেতরই ব্যথায় কেঁপে ওঠে। নুসরাতের বাবা একেএম মুসা দ্রুত তদন্ত শেষ করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাড়ে ছয় মাস ধরে আমাদের পরিবারের সদস্যরা কাঁদছি। আমাদের নির্ঘুম দিন কাটছে। তবে ওই কান্না আর আজকের কান্নার মধ্যে তফাত আছে। এই কয়টা মাস এ দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি। আজ সব আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। এ রায়ে নুসরাতের আত্মা আজ শান্তি পাবে।’
তারা সুবিচার পেয়েছেন তবে রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেন না বলে জানান নুসরাতের ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান।
তবে আসামীদের সহযোগীরা প্রতিশোধ নিতে পারে এমনটি জানিয়েছেন একেএম মুসা। তিনি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তরা হলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে তার মা।
২৮ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট এএসএম এমরানের আদালতে নুসরাত তার উপর যৌন নিপীড়নের জবানবন্দি প্রদান করে। একই দিন সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হয়।
১০ এপ্রিল থানা থেকে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, ২৯ মে এ মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
এমএস/এসি
আরও পড়ুন