রাজশাহীতে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা: পুলিশের তথ্যে গড়মিল!
প্রকাশিত : ১৫:৫২, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
রাজশাহীতে শরীরে আগুন দিয়ে কলেজছাত্রী লিজা রহমানের আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশ ও ভিকটিম সার্পোট সেন্টারের দেয়া তথ্য-উপাত্তে গড়মিল পেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কার্যক্রমে অংশ হিসেবে রাজশাহীতে এসে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে স্থানীয় রেস্টহাউজে সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত শাখার পরিচালক আল মাহমুদ ফাইজুল কবির।
তিনি জানান, আগামী রোববার কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি। কমিটি পুলিশ ভিকটিম সার্পোট সেন্টার, লিজার পরিবার, স্বামী শাখাওয়াতের পরিবার ও দুইজনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
শাহমাখদুম থানা পুলিশ ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার কর্তৃক তদন্ত কমিশনকে দেয়া তথ্য, ভিডিও ফুটেজ, এজাহার ও সাধারণ ডায়েরির তথ্য এবং স্বাক্ষীর দেয়া তথ্যে গড়মিল রয়েছে জানিয়ে আল মাহমুদ ফাইজুল কবির বলেন, সাধারণ ডায়েরিতে লিজার শ্বশুর-শাশুড়ির নাম থাকলেও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার তথ্য দিয়েছিলো লিজা তার শ্বশুর-শাশুড়ির নাম জানতেই বাইরে গিয়েছিল এবং বাইরে গিয়ে শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এখানেই তথ্যের গড়মিল রয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, লিজা রহমান মৃত্যুর আগে তার ভাইকে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দিয়েছিল। যেখানে দাবি করা হয়েছে, পুলিশ মামলা নিতে নারাজ ছিল। মামলা না নেয়ায় সে আত্মহত্যা করেছে।
এর আগে কলেজছাত্রী লিজা রহমানের আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি খুঁজে পায়নি পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। তবে ঘটনাটি থানায় রেকর্ড না রাখায় শাহমখদুম থানার ওসিকে কৈফিয়ৎ তলবের সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
আরএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) সালমা বেগমের নেতৃত্বে গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে গত ৩ অক্টোবর পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে থানা থেকে বের হয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় কলেজছাত্রী লিজা। প্রথমে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলেও রাতেই তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়। শরীরের ৬৩ শতাংশ দগ্ধ লিজা বুধবার ভোরে মারা যান।
লিজা রহমানের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। তিনি রাজশাহী মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বামী সাখাওয়াত রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাখাওয়াতের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খাজুরা থান্দুরা গ্রামে। বিয়ের পর লিজা ও সাখাওয়াত রাজশাহী শহরের আলাদা দুটি মেসে থাকতেন।
কিন্তু ছেলের পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় স্বামীর সঙ্গে মতোবিরোধ হয় লিজার। এতে স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এ নিয়ে গত শনিবার লিজা প্রথম নগরীর শাহমখদুম থানায় অভিযোগ করতে যান। তার অভিযোগ আমলে না নিয়ে পুলিশ তাকে থানা চত্বরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
পরে সেখান থেকে বেরিয়ে থানার গেটে থেকে ১০০ গজ দূরে মহিলা টিটিসির গেটের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগান লিজা। এ ঘটনায় পুলিশ ও মানবাধিকার কমিশন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এ ঘটনায় লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করে লিজার বাবা আলম মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে নগরীর শাহমখদুম থানায় দায়ের করা মামলায় লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ছাড়া শ্বশুর মাহবুবুল হক খোকন ও শ্বাশুড়ি নাজনীন আক্তারকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাদের সবাই গ্রেফতার করে।
আই/
আরও পড়ুন