ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

সক্ষমতা বাড়াবে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প’

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ১১:১২, ২৭ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১১:১৬, ২৭ অক্টোবর ২০১৯

আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা দ্বিগুন করতে চায় সরকার। এ জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

বছরে ১২ কোটি আয় বাড়বে বলে জার্মান থেকে এরই মধ্যে অত্যাধুনিক মোবাইল হারবার ক্রেন এনে তা অপারেশনাল (কার্যক্রম চালু) করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরের জেটি সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সক্ষমতা বাড়াতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প’। যার টাকার অংক হচ্ছে ছয় হাজার কোটি টাকা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে এ বন্দরের ওপর যে চাপ বাড়বে সে জন্যই সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নানা সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে চালু হওয়া আন্তর্জাতিক এ সমুদ্র বন্দরটি ২০০১ সাল থেকে লোকসানে পড়ে মৃতপ্রায় বন্দরে পরিণত হয়েছিল। দেশি বিদেশিরাও এ সময়ে এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে এ অবস্থা। বন্দর সৃষ্টির গোড়ার দিকে বেশ কর্মচাঞ্চল্য হয়ে ওঠে এ বন্দরটি। সেসময় নোঙ্গর করা সারি সারি জাহাজের আলোর ঝলকানিতে রাতের পশুর নদীর দৃশ্য হয়ে ওঠে অন্যরকমে। তবে মাঝামাঝি সময়ে সে আলোর ঝলকানিতে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। সেই অন্ধকার থেকে আবার আলোর জগতে ফিরে এ বন্দর। যেখানে দিনের পর দিন জাহাজ শূন্য থাকত পশুর নদী। সেখানে এখন ৭০ থেকে ৮০ টি জাহাজের অবস্থান। ক্রমেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে বন্দরের।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কমাল জানান, গত অর্থ বছরে এ বন্দরে সবমিলে ৯১২ টি জাহাজ ভিড়েছে । কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টনের মতো। আর কন্টেইনার আনা নেয়া হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার টিউজ (২০ ফিট সমকক্ষ কন্টেইনার)।

তিনি বলেন, এই সময়ে সবচেয়ে বেশি এসেছে পাথর, সার আর কয়লা পণ্য। এ ছাড়া গাড়ি, মেশিনারি ও ক্লিংকারও এসেছে দেখার মতো।

মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ শিপিং এজন্টে এ্যাশোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জার্মান থেকে মোংলা বন্দরে যে মোবাইল হারবার ক্রেন এনেছে তাতে তারা উপকৃত হচ্ছেন। এখন কন্টেইনার ভ্যাসেল থেকে পণ্য আনলোড করতে পারছেন তারা। কিন্তু তার সঙ্গে প্রাইম ওভার, মুভমেন্ট করার জন্য ফরক্লিব না থাকার কারণে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বিদেশ থেকে যে কন্টেইনারগুলো আসছে তা চাহিদা অনুযায়ী শিপমেন্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কন্টেইনার ট্র্যাকিংয়ের ব্যবস্থাও বাড়ানোর কথা জানান তিনি।

মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই মুহূর্তে তিনি আউটারবারের ড্রেজিং করতে বলেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ড্রেজিং ঝুলে আছে। সাত কিলোমিটার নটিক্যাল মাইল আউটারবারে ড্রেজিং না হওয়ায় ১০ মিটার গভীরের জাহাজ তারা এ বন্দরে প্রবেশ করাতে পারছেন না বলেও ক্যাপ্টের রফিক জানান।

ড্রেজিং না হওয়ায় বন্দরের সফলতা আসবে না বলে জানান এ বন্দরের ব্যবসায়ী হোসানইন মোহাম্মদ দুলাল এবং বদিউজ্জামান টিটু। তারা জানান, ড্রেজিং এ বন্দরের বড় সমস্যা। ড্রেজিং না হওয়ায় বড় কোনও জাহাজই এ বন্দরে ঢুকাতে পারছেন না তারা। বন্দরের বর্হিঃনোঙ্গরে (আউটারবার) বিদেশি বড় জাহাজ অবস্থান করিয়ে সেখান থেকে ছোট লাইটারেজে করে পণ্য খালাস করতে হয়। এটি একটি মারাত্মক ঝুঁকি এবং ঝামেলার কাজ। ড্রেজিং না হওয়ায় নাব্য সংকটের কারণে জাহাজগুলো ওপরে আসতে পারে না। এ জন্য বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হলে আগে এই ড্রেজিং করতে হবে বলে এ দুই ব্যবসায়ী জানান। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম মোজাম্মেল হক জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা হবে আমদানি রফতানি বাণিজ্যের বড় কেন্দ্র। তাই এর আগেই নিজেদের সক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে চান তারা। এ জন্য বন্দরের নাব্য ঠিক রাখতে আমরা আউটারবারে ড্রেজিং করব।

বন্দরের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, মোংলা বন্দরে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই মুহূর্তে অনেকগুলো প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রথমত সমুদ্র থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ১৪৫ কিলোমিটারের পশুর নদীতে ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ড্রেজিং সম্পন্ন হলে নয় থেকে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ এ বন্দরে অনায়াসেই ঢুকতে পারবে। আউটারবারের ড্রেজিং প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হওয়া মাত্র আগামী বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এর কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, সক্ষমতা বাড়াতে শুধু ড্রেজিং করলেই হবে না, বন্দরের ভেতরের অবকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। বন্দরের জেটি, ক্রেন, জেটি উয়ার্ড ও রাস্তাঘাটের বেশ কিছু দূর্বলতা আছে। এগুলো ঠিক করতে বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদ হয়ে আছে, আরও চারটি বড় প্রকল্প এ বছরের ডিসেম্বরে অনুমোদন পাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে ‘মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প’। যার টাকার অংক হচ্ছে ছয় হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে দুটি জেটি, গ্যান্টি ক্রেন, ইয়ার্ড, মাল্টি পারপাস গাড়ির ইয়ার্ড, বন্দর ভবন সম্প্রসারণ, অফিসার স্টফদের জন্য বাসভবন, মাল্টি কমপ্লেক্স, শিপ ইয়ার্ড ও ফ্লাইওভারসহ বেশ কিছু প্রকল্প। এসব প্রকল্প হয়ে গেলে এ বন্দরটা চার কিলোমিটার সম্প্রসারণ হবে। যা বর্তমানে আছে এক কিলোমিটার। আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলেও বন্দরের চেয়ারম্যান জানান।

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি