রুপালী ইলিশে, সোনালী হাসি!
প্রকাশিত : ১৬:০৬, ২৮ অক্টোবর ২০১৯
চলতি মাসের ৯ই অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ সময় প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশই মিঠা পানিতে ডিম পাড়ে।
তাই আশ্বিনের পূর্ণিমার চারদিন আগে এবং পূর্ণিমার পর ১৮ দিন মোট ২২ দিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, নদীর মোহনাসহ যেসব জেলা ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যায় সেখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্ত মৌসুমী জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকার দোহার উপজেলা পদ্মা নদীতে নিয়মিত ইলিশ ধরায় ব্যস্ত। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাকে ঝাকে রুপালী ইলিশ।
অন্যদিকে প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে গত শনিবার পর্যন্ত ২০৫ জনকে আটক করে সাজা দিয়েছেন। এসময় প্রায় সাড়ে ৩ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ জব্দ করে ভ্রাম্যমান আদালত। পরে জব্দকৃত মাছগুলো উপজেলার ২৫টি এতিমখানা ও মাদরাসা, ২টি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং দরিদ্র মানুষদের মাঝে বন্টন করা হয়। রুপালী ইলিশ হাতে পেয়ে সোনালী হাঁসিতে মেতে উঠেন এতিম ও অসহায় শিশুরা এবং হতদরিদ্র মানুষগুলো।
এতিমখানায় থাকা শিশু-কিশোরদের খাবারের মান সম্পর্কে সবারই কমবেশি ধারণা রয়েছে। আশ্রয়ই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে খাবার আর কি থাকতে পারে। ভাগ্য ভাল হলে মাঝে মাঝে দুই/এক টুকরো মাংস বা চাষের কোনো মাছ। নদীর মাছ যেখানে অনেকটাই অনুপস্থিত সেখানে দামি ইলিশের কথা তো কল্পনাই করা যায় না।
কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকলেও বাজেটের স্বল্পতার কারণে শিশুদের মুখে তুলে দিতে পারে না ইলিশের স্বাদ। তবে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে একমাত্র ওরাই নিতে পারছে ইলিশের স্বাদ। যে কারণে এ সময়টাতে মহাখুশির ঝিলিক দেখা যায় ওদের চোখে মুখে। গত ৯ অক্টোবর থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ জব্দ করে দোহার উপজেলা ও থানা প্রশাসন। জব্দকৃত মাছগুলোর প্রায় পুরো অংশই বিতরণ করা হয়েছে দোহারের বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসাগুলোতে।
জব্দকৃত মাছগুলো নষ্ট না করে এতিমদের খাবারের জন্য তুলে দেয়ায় সাধুবাদ জানাচ্ছে সবাই। জাতীয় মাছ ইলিশ পেয়ে খুশি এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিশু-কিশোররা।
আর এতিম শিশু-কিশোরগুলোর মুখে এক চিলতে হাসি দেখে খুশি উপজেলা প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা আফরোজা আক্তার রিবা ও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রসহ অভিযানে সংশ্লিষ্ট সবাই। উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদরাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝা যায় তাদের খুশির বহিঃপ্রকাশ।
নারিশা মাদরাসা শিক্ষার্থী মো. সোহাগ বলেন, ইলিশ মাছ অনেক মজা। এই মাছের ঝোল দিয়েও ভাত ভাল লাগে। গত বছরও ইলিশ দিয়া ভাত খাইছিলাম। তাই এবারও আশা ছিলা কবে ইলিশ মাছ পামু,পাইচিও।
সোহাগের সহপাঠী শাহাদাত বলেন, এ বছর যত ইলিশ খেয়েছি সারা জীবনেও এত ইলিশ খাইনি।
এতিমখানা ও মাদরাসার প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা খুশি ইলিশের স্বাদ পেয়ে। সেই সঙ্গে খুশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও। কয়েকটি এতিমখানার শিক্ষক ও পরিচালকরা জানান তাদের কষ্টের কথা।
নারিশা মাদরাসার শিক্ষা সচিব যুবায়ের আহমদ সাকী বলেন, আমাদেরও মন চায় ছোট বাচ্চাদের ভাল মানের খাবার দেওয়ার। কিন্ত বাজেটের একটা ব্যাপার থাকে। তাই সব সময় ইলিশের মত সুস্বাদু মাছ চাইলেও খাওয়াতে পারি না। বছরের এই সময়টাতে প্রশাসন থেকে যখন মাছ দেওয়া হয়, তখন এসব শিশু শিক্ষার্থীদের মুখের হাসি দেখতে খুব ভাল লাগে। তবে আমরাও চাই, মা ইলিশ নিধন একেবারে বন্ধ হোক।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, প্রতিবছরই জব্দকৃত মাছগুলো ফেলে না দিয়ে এতিমখানায়, মাদরাসা ও হতদরিদ্রদের মাঝে দেওয়া হয়। মাছগুলো এতিম শিশুদের মাঝে বিতরণ করতে নিজেরই ভাল লাগে।
এতিম শিশুগুলোর মুখের হাসিতে সারাদিনের অভিযানের ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা আক্তারের নির্দেশনা রয়েছে মাছ এতিমখানা ও মাদ্রাসাগুলোতে দেয়ার জন্য।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা আক্তার রিবা বলেন, এতিমখানার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে যখন ইলিশগুলো তুলে দেই, তখন ওদের হাসিমাখা মুখখানি কতটা যে আনন্দ দেয় তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
একজন মা হিসেবে বুঝতে চেষ্টা করি ওদের মুখের কথা, ওদের চাহনি। দিনরাত পরিশ্রমের পর মাছগুলো যখন এতিম শিশুগুলোর হাতে তুলে দেই তখনই ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়ে যায়। ওদের হাসির রেশ ধরে আমরা অভিযানের স্বার্থকতা নিয়ে ঘরে ফিরি।
তিনি বলেন, অভিযান করে নয়, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই রক্ষা হবে দেশের সম্পদ।
আই/
আরও পড়ুন