ঢাকা, বুধবার   ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

যমুনায় উৎসব মুখর পরিবেশে চলছে ইলিশ আহরণ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২২:৫৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

প্রজনন মৌসুমে সিরাজগঞ্জে যমুনায় মা ইলিশ রক্ষায় টানা ২২ দিন ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার পর বৃহস্পতিবার থেকে নদীতে ফের শুরু হয়েছে নির্বিগ্নে ইলিশ আহরণ। বিগত দিনের বেকারত্ব আর লুকিয়ে মাছ ধরার প্রবনতা দুরে ঠেলে অনেকটা উৎসব মুখর পরিবেশেই চলছে রুপালী শস্য ধরার কাজ। তবে যমুনায় ইলিশের আকাল দেখা দেয়ায় জেলেদের মাথায় হাত। খুব একটা ইলিশের দেখা না মেলায় অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে তাদের মাঝে। এদিকে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে এবার ইলিশের ব্যাপক বিস্তারের কথা জানিয়ে উত্তরবঙ্গের অন্যতম জেলার চৌহালী মোহনার প্রজনন কেন্দ্রে ৬৬ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ।

আমাদের গর্বের ধন সুস্বাদু ইলিশের মাছের টুকরো বাঙালীর পাতে শোভা পেতে গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা বন্ধে সরকারী নিষেধাজ্ঞা শেষে যমুনা নদীর দক্ষিনে চৌহালীর ব্রিদাশুরিয়া থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে শত-শত নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিনে উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের বারবালা, চাঁদপুর, বোয়ালকান্দি, স্থলচর, চালুহারা, মিস্ত্রীগাঁতী, উমরপুর, ঘোরজান, বাঘুটিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী জুড়ে কেবলই জেলেদের মাছ ধরা নৌকার সমারহ। ক্যারেন্ট জাল, দরি, নৌকা নিয়ে ছেলে-বুড়ো সবাই এখন মাছ শিকারে ব্যস্ত। তবে দেখা নেই সেই কাঙ্খিত ইলিশের। অতীতে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যেভাবে ইলিশ ধরেছে জেলেরা সেই মাছ এখন নাই। যাওবা মিলছে ৪শ থেকে ৬শ হাত লম্বা জালে মাত্র ২/৪টি ঝাটকা। তাই এবার মাথায় হাত ক্ষত্রিগ্রস্ত জেলেদের। 

এ ব্যাপারে চাঁদপুর চরের বৃদ্ধ জেলে সন্তেষ আলী, ব্রাক্ষ্মনগ্রামের আজিজল হক জানান, দীর্ঘ দিন পর আমরা জাল নিয়ে যমুনায় এসে হতাশ হয়েছি। গত বছর জাল থেকে ইলিশ ছাড়াতেই ব্যস্ত থাকতে হতো। এখন ২ ঘন্টা পর-পর জাল তুলে আর সেরকম খুব একটা মাছ মিলছেনা। ঋন করে তৈরী করা জাল নৌকার টাকা উঠেবেনা। তারা আরো জানান, এবার সরকারী ভাবে কোন চালও পাইনি।
এদিকে জালে ইলিশ না মেলায় বেতিল বাজার সহ উপজেলার ৩৩টি হাট বাজারেও পর্যাস্ত ইলিশ নেই। বেতিল গ্রামের প্রবীন জেলে সুশীল চন্দ্র হলদার ও সিরাজুল ইসলাম জানান, ছোট বেলা থেকেই মাছ ধরার সাথে নিয়োজিত। এ থেকেই রুটি রোজগার। তবে ইলিশের এমন আকাল কোন দিন দেখিনি।  

তবে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, চৌহালী উপজেলার ১৪৫৭ জন জেলে সহ অনিবন্ধিত কয়েক হাজার জেলেদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে কোন নিয়ম নীতি ও নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ভয়-ঢর উপেক্ষা করে ইলিশ শিকার করেছে। যে কারনে এর প্রচুর্যতা অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি ডিম ছাড়ার কারনে এই ইলিশ গুলো সমুদ্রের দিকে চলে যাওয়ায় এমন অবস্থা।  

এবার নিষেধাজ্ঞায় ইলিশের পরিমান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ মৎস্য বিভাগের। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার শাহেদ আলী এবং চৌহালী উপজেলা মৎস্য অফিসার আতাউর রহমান জানান, এবার যমুনায় প্রজননের জন্য আসা ৬৬ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ায় গত বছরের চেয়ে কয়েক গুন বেশি ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। ইলিশ রক্ষা অভিযান চলাকালে চৌহালীতে ১০৫ জন সহ জেলায় ২৭৭ জন অসাধু জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, দেড় টন মাছ উদ্ধার সহ ২২ লক্ষ মিটার ক্যারেন্ট জাল আটক করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি