মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণে অধ্যক্ষ আটক, এলাকায় তোলপাড়
প্রকাশিত : ১৯:৩৪, ৫ নভেম্বর ২০১৯
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোসলেম উদ্দিন
ফেনীর নুসরাত হত্যার ঘটনার রায় ঘোষণার এক সাপ্তাহ পার না হতেই রাজধানী ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় মাজীদুন নিসা মহিলা মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যে অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ওই মাদ্রাসা থেকে ধর্ষক অধ্যক্ষকে আটক করা হয়।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোসলেম উদ্দিন (৫০) শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর বাসিন্দা। তিনি ২০০৮ সাল থেকে অত্র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই ঘটনার পূর্বেও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিলো বলে এলাকাবাসী জানায়।
তখন স্থানীয়দের মধ্যে জামাল উদ্দিন, আরিফ ও হালিম অতীতের ঘটনাগুলোর সালিশ করেছিলেন। যে সালিশের মাধ্যমে ঘটনার সঠিক বিচার না করায় পুনঃরায় সে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই তাদের অভিযোগ।
এদিকে, অত্র প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের স্ত্রীই মহিলা শিক্ষার্থীদের দেখভাল করতেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের স্ত্রীও গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
নির্যাতিতা শিক্ষার্থী জানান, গত শুক্রবার সকালে তাকে অধ্যক্ষের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ তাকে ধর্ষণ করেছে। বিষয়টি কাউকে জানাতে বারন করে এবং পরিবারসহ আশপাশের লোকজনকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয় অধ্যক্ষ। গতকাল তার শরীর অসুস্থ হলে বিষয়টি সে তার মায়ের কাছে খুলে বলে। এরপর তার মা মেয়েকে ধর্ষণের বিচার দাবি করলে বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানি হয়।
জানা গেছে, নির্যাতিতার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমামতি করেন ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়েদের সুশিক্ষা গ্রহণের জন্য আমরা মাদ্রাসায় দিয়েছিলাম। কিন্তু একজন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমের পক্ষে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় মেয়েদের সুশিক্ষা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।
এদিকে এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। তাই অধ্যক্ষকে আটকের পরে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের মাদ্রাসা থেকে নিয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির জমির মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার মায়ের নামে ৫ শতাংশ জমিতে টিনসেড ঘরে প্রায় শতাধিক মহিলা শিক্ষার্থীকে নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তার মাতা মাজীদুন নিসার নামেই নামকরণ করা হয়েছে মাদ্রাসাটির।
তবে বিভিন্ন সময় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থাকার পরও কেন তাকে রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারেননি তিনি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে স্থানীয়রা আটক করে থানায় জানালে ঘটনাস্থল থেকে অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দিনকে আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। এসময় কয়েক'শ এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ধর্ষকের বিচার দাবিতে মিছিল করেছে।
অন্যিদকে ধর্ষিতা শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধর্ষিতার শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে প্রেরণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে অধ্যক্ষকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে জানায় পুলিশ।
কেআই/এনএস
আরও পড়ুন