‘৭শ টাহা ক্যামনে দিমু’
প্রকাশিত : ১৮:৫৬, ৮ নভেম্বর ২০১৯
ধানদী বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
‘মাইয়াডার ফেয়ারওয়েল ফি এত টাহা কই পামু। ক্যামনে দিমু ৭’শ টাহা। মোটরসাইকেলে যাত্রি টাইন্যা সংসার চলে। অর ল্যাহা-পড়ার খরচও চালাই। এ্যাহন ফাইনাল পরীক্ষার সময় একটু কোম ধরলে কি অইতো।’
এমনভাবেই ক্ষোভের কথা জানান মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী বহনকারী নুরুল ইসলাম। নিম্ন আয়ের এ বাবার ৫ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে পটুয়াখালীর বাউফলের ৭০নং ধানদী বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিএসসি) অংশ নেবে। তার আগে আগামী শনিবার বিদ্যালয়টিতে বিদায় সংবর্ধণা অনুষ্ঠিত হবে, যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা ধরা হয়েছে ৭ শ টাকা করে। অনুষ্ঠানের আগেই এ চাঁদা পরিশোধ করতে হবে বলে বিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
স্থানীয় বাজারের যাত্রির অপেক্ষায় থাকা নুরুল ইসলাম মেয়ের চাঁদার বিষয়ে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছিলেন এ প্রতিবেদককে।
জানা যায়, আগামি ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট বা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি)। ধানদী বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা অংশগ্রহণ করবে। প্রাথমিকের চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৯ নভেম্বর বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উপর ৭ শত টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ চাঁদা নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের জন্য প্রায় অসাধ্য বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
এ ছাড়াও বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১ম থেকে ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকেও ৩০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফি সরকার কর্তৃক ৬০ টাকা হারে নির্ধারিত থাকলেও এর আগে ওই বিদ্যালয়েল কর্তৃপক্ষ ১ থেকে ২ শ টাকা ফি আদায় করত বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শঙ্কর বাবু।
অভিযোগ রয়েছে, এলাকায় নিজ পরিচিতি তুলে ধরতে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিজ খেয়াল-খুশি মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন ও চাঁদা আরোপ করেন। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কিছুরই পরোয়া করেন না তিনি। একইসাথে সভাপতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ক্লাস না নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং এ যেতে বাধ্য করেন শিক্ষকরা।
ধানদী বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক না প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের বিদ্যালয়ের এমন অনুষ্ঠান হয় তবে তার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন চাঁদা নেয়া হয় না।
অভিযোগের বিষয়ে ধানদী বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আভা রাণী বলেন, ‘আমি স্কুলে অল্প কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। সভাপতি ও শিক্ষকরা সভা করে চাঁদার বিষয়টি নির্ধারণ করেছেন। ওই সভায় আমি ছিলাম না। তবে এক শিক্ষক কোচিং করিয়েছেন, সে কোচিং বাবদ ও অন্যান্য খরচ হিসেবে টাকা নেয়া হচ্ছে।’
তবে এমন চাঁদা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মো. দলিল উদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রাইভেট ও অন্যান্য খরচ বাবদ টাকা নেয়া হচ্ছে। প্রতিবছর নিজ অর্থায়নে অনেক কাজ করি। এবারও বাড়তি খরচ আমাকেই দিতে হবে।’
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এমএস/এনএস
আরও পড়ুন