কুড়িগ্রামে যুবককে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি
প্রকাশিত : ১৭:০৫, ৯ নভেম্বর ২০১৯
ঢাকায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বেড়াতে নিয়ে এসে বাবুল মিজি (৪১) নামে এক যুবককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজরা বাবুলকে ৪দিন আটকে রেখে তার স্ত্রীকে জীবনহানির ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে। সেই সাথে বাবুল মিজির পালসার মোটরবাইকও আটকে রাখে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার (৩৫) ও আব্দুল খালেক (৪৮) নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে রৌমারী থানা পুলিশ। পুলিশি তৎপরতায় গত বুধবার বাবুল মিজিকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। মূল আসামী আনিছুরকে আটক আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয় পুলিশ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার বিংগুলিয়া গ্রামের বাদশা মিয়ার পূত্র বাবুল মিজি ঢাকার ডেমরার কোনাবাড়ীতে বোন জামাই দুলাল হোসেনের বাসায় থেকে গাজীপুরে কাজ করেন।
এ কাজের সূত্র ধরে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামের মৃত.আছর উদ্দিনের পুত্র আনিছুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তারা ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়েও আলাপ-আলোচনা করে।
পরিচয়ের সূত্র ধরে চলতি মাসের ২ নভেম্বর বাবুল মিজি তার দুলাভাই দুলাল মিয়ার নিজস্ব লাল-কালো রংয়ের পালসার মোটরবাইক নিয়ে আনিছুর রহমানসহ সন্ধ্যা ৬টায় রৌমারীতে বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে ৪ নভেম্বর রৌমারী থেকে আনিছুরের অপর সহযোগী নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার বাবুল মিজির মোবাইল ফোনে তার স্ত্রী মিনু বেগমকে বিকেল ৩টার দিকে মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেন। এসময় বাবুল মিজিকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মেরে তাকে আটকের কথা জানানো হয়। তাকে সুস্থভাবে ফিরে পেতে চাইলে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কথামতো বাবুলের স্ত্রী মিনু বেগম তাদের প্রেরিত বিকাশ নম্বরে কয়েক দফায় ৭০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এরপরও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তারা পরদিন (৫ নভেম্বর) বাবুল মিজির দুলাভাই দুলাল হোসেন রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে চাঁদপুর থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন।
এজাহারে আনিছুর রহমানসহ ৬ জনের নাম দিয়ে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। অপর আসামীরা হলেন, রৌমারী সদরের পোড়ার চরের বক্তার আলীর ছেলে নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার (৩৫), বাওয়াইয়ের গ্রামের মৃত. শের আলীর ছেলে আব্দুল খালেক (৪৮), ইজলামারী হলহলি গ্রামের হাজী এবারত হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৩৭), ভিটাবাড়ীর রায়হান (২৪), মন্ডলপাড়ার বেলাল হোসেন (২৩)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫জন।
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিষয়টি ৬ নভেম্বর অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে রৌমারী পুলিশ স্টেশনকে আসামীদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দেন। দুপুরেই তৎপরতা শুরু করে রৌমারী থানা পুলিশ।
পুলিশের অভিযানের খবর আঁচ করতে পেরে অপহরণকারীরা বাবুল মিজিকে ওইদিন বিকেল ৬টায় রৌমারীর কর্ত্তিমারী বাজারে নিয়ে গিয়ে একটি বাসে তুলে দেয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ আনিছুর রহমানকে ধরতে না পারলেও তার অপর দুই সহযোগী নুরন্নবী ওরফে মানিক মাস্টার ও আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ আবু মো. দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা পুলিশ সুপার নির্দেশনায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে পুলিশি তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। বিকাশে পাঠানো ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা অপহরণকারীরা তুলে নেয়। বাকি ৩০ হাজার টাকা বিকাশের দোকানে এখনো রয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, চাঁদপুরের অধিবাসী এক যুবককে ঢাকা থেকে রৌমারীতে অর্থ লেনদেনের কারণে নিয়ে এসে আটকে রাখার অভিযোগ পাই।
তিনি বলেন, চাঁদপুর থেকে অপর এক ব্যক্তি বিষয়টি আমাকে জানান। এরপরই রৌমারী পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেই। ইতোমধ্যে দুজন আটক হয়েছে। মূল আসামী ও মোটরবাইকটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এআই/আরকে
আরও পড়ুন