ভাসানচরকে সন্দ্বীপে অন্তর্ভুক্তির দাবি
প্রকাশিত : ১৮:১৪, ১০ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২৩:৩৯, ১০ নভেম্বর ২০১৯
চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সাবেক ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন বর্তমান ভাসানচরকে সীমানা নির্ধারণ ব্যতীত হাতিয়া-নোয়াখালীর থানা ঘোষণার প্রতিবাদ ও সন্দ্বীপের মূল ৬০ মৌজা জরিপের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অডিটোরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সন্দ্বীপ ডেভেলপম্যান্ট ফোরাম ঢাকার সভাপতি নুরুল আকতারের সভাপতির লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৬০ মৌজা নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা গঠিত। কিন্তু মেঘনার করালগ্রাসে সন্দ্বীপ ভাঙতে ভাঙতে ৯০ বর্গ মাইলে এসে দাঁড়িয়েছে। সন্দ্বীপের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সাগরে বেশ কিছু চর জেগে উঠে, যা সন্দ্বীপবাসীর মনে আশার সঞ্চয় করেছে। এই চরগুলোর কিছু অংশ সন্দ্বীপের কাছে আর কিছু একটু বাইরে। এর একটি হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সাবেক ইউনিয়ন ‘ন্যায়মস্তি’,যার বর্তমান নাম ভাসানচর।
‘ভাসানচর জেগে ওঠার পর বন বিভাগ থেকে সন্দ্বীপ উপজেলার অধীনে সেখানে অনেক বছর ধরে বনায়ন করা হয়েছিল। সম্প্রতি এই চর নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা নিজেদের দাবি করলে সন্দ্বীপবাসী এর প্রতিবাদ করে এবং ২০১৭ সালে সীমানা নির্ধারণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু কোন প্রকার জরিপ ছাড়া হঠাৎ করে ভাষানচরকে নোয়াখালীর একটি থানা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভাষানচর প্রাচীনকাল থেকেই সন্দ্বীপের একটি অংশ এবং জরিপ চলাকালীন সীমানা নির্ধারণ ব্যতীত অবৈধভাবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যা আইনের পরিপন্থি।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সন্দ্বীপের চার কিলোমিটার দূরে থাকা ভাষানচর হাতিয়া থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে হলেও সন্দ্বীপকে উপেক্ষার কারণ কী তা বোধগম্য নয়। তাই সন্দ্বীপবাসীরা এই স্বীকৃতি চায় যে, নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া ও একই স্থানে জেগে ওঠা সন্দ্বীপের ন্যায়মস্তি চর যেন সন্দ্বীপেরই অংশ থাকে।
লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, রূপ লাবণ্যের অপরূপ লীলাভূমি সাগর দুহিতা সন্দ্বীপ। যার রয়েছে শত শত বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য। নদী ভাঙ্গনের ফলে এই দ্বীপের হাজারো মানুষ তাদের ঘর বাড়ি হারিয়েছে। আমি নিজেও একজন নদী সিকস্তি মানুষ। নদী সিকস্তি হওয়ার কারণে সামরিক বাহিনীতে কাজ করার সময় এই শব্দটা আমাকে শুনতে হয়েছে। সন্দ্বীপে ঘর বাড়ি না থাকায় আমার নামের পাশে নদী সিকস্তি লেখা হতো যা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। এ জন্য ২৫ বছর আমি ঢাকাতে পোস্টিং নিয়ে আসতে পারিনি। এখনও আমি বুকের ভেতরে সন্দ্বীপকে খুঁজি। আমার পুরনো ঠিকানা ফিরে পেতে চাই।'
তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ভাসানচরকে সন্দ্বীপের সীমানায় অন্তর্ভুক্তি করতে হলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। এ জন্য ওনার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাহলেই একটি সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যাবে বলে মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব তপন বণিক, সাবেক আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল, এডভোকেট আনোয়ারুল কবির, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল হালিম, লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী, সাবেক সচিব আ ল ম আব্দুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার ডা. মোহাম্মদ মহসিন, সাবেক দায়রা জজ আবু সুফিয়ান, সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ফওজুল কবির খান, আহমেদ মোস্তফা।
বক্তারা বলেন, সন্দ্বীপের সাবেক ইউনিয়ন নেমস্তি বর্তমান (ভাসানচর) সহ জেগে উঠা সব ভূমি এবং ৬০ মৌজার মালিকানা স্যাটেলাইট জরিপের মাধ্যমে সন্দ্বীপবাসীকে বুঝিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মত প্রকাশ করেন, শিক্ষাবিদ ও চেরী ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ এর প্রিঞ্চিপাল ড. সালেহা কাদের, গ্রামীণ ব্যবসা বিকাশের সাবেক এমডি সালেহা বেগম, সেলিনা চৌধুরী, প্রফেসর হান্নানা বেগম, সাংবাদিক কানাই চক্রবর্তী,মনিরুল হুদা বাবন, শামসুল কবির খান, মাইনুর রহমান, ব্যাংকার মোস্তফা কামাল পাশা, তাহের আহমেদ চৌধুরী বাদল, এ কে এম শাহজাহান প্রমুখ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, আবুল কালাম আজাদ, সমাজকর্মী হুমায়ুন কবির, এস এম যাহেদুল আলম সুমন, আনোয়ারুল আলম মঞ্জু, সাংবাদিক শাহাদাৎ হোসেন আশরাফ, এ আর সোহেল, সাংবাদিক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক, এম এন হুদা।
সন্দ্বীপ ডেভেলপম্যান্ট ফোরাম ঢাকা, সন্দ্বীপ সমাজ উত্তরা ঢাকা, বৃহত্তর মিরপুর সন্দ্বীপ সমাজ ঢাকা, সোনালী মিডিয়া ফোরাম ঢাকা, হরিশপুর ইউনিয়ন নদী সিকস্তি পুনর্বাসন কমিটি ঢাকা, সন্দ্বীপ ষ্টুডেন্ট ফোরাম ঢাকা, সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল এসোসিয়েশন, সন্দ্বীপ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, মুছাপুর বদিউজ্জামান হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ ও সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব সহ চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, আরব আমিরাত ও নিউইয়র্কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, চলমান আন্দোলনের পাশাপাশি সন্দ্বীপবাসীর দাবীর বিষয়ও প্রকৃত চিত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রবীন আইনজীবি এ এম আনোয়ারুল কবিরকে আহবায়ক ও সন্দ্বীপ ডেভেলপম্যন্ট ফোরামের সভাপতি নুরুল আকতারকে প্রধান সমন্বয়কারী এবং সন্দ্বীপের সাবেক সচিবসহ অবসরপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা ও আন্দোলনরত ১০ সংগঠনের ১ জন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কেআই/আরকে
আরও পড়ুন