অবশেষে মিলল ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের পরিচয়
প্রকাশিত : ২৩:৪৭, ১২ নভেম্বর ২০১৯
দুর্ঘটনা কবলিত দুই ট্রেন
অবশেষে মিলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলস্টেশন এলাকার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয়। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সারাদিন অনেক যাচাই-বাছাই শেষে রাত ১০টার দিকে নিহতদের শনাক্তকৃত এ তথ্য জানায় জেলা প্রশাসন।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কসবা উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। আহতরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে দেয়া তথ্যানুসারে নিহতদের মধ্যে ৬ জন শিশু। আর বাকী ১০ জনের মধ্যে ৪ জন নারী এবং ৬ জন পুরুষ।
নিহতদের পরিচয় জানতে স্থানীয় বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরা নিহতদের হাতের আঙুলের ছাপ নিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন।
নিহতরা হলেন- মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০), চাঁদপুরের হাইমচরের কাকলী (২০), চাঁদপুরের কুলসুম বেগম (৩০), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পিয়ারা বেগম (৩২), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল-আমিন (৩০), হবিগঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের রিপন মিয়া (২৫), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুল রহমান (৫৫), নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩), চুনারুরঘাটের তিরেরগাঁওয়ের সুজন আহমেদ (২৪), হবিগঞ্জের বহুলার ইয়াছিন আরাফাত (১২), হবিগঞ্জের বানিচংয়ের আদিবা (২), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের সোহামনি (৩), চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার ফারজানা (১৫), চাঁদপুরের হাইমচরের মরিয়ম (৪) এবং চাঁদপুর সদরের ফারজানা (১৫)।
এদিকে, এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, অর্থমন্ত্রী, আ হ ম মুস্তফা কামাল, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চ্যেধুরীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এছাড়াও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনায় তূর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকো মাস্টার তাছের উদ্দিন, সহকারী লোকো মাস্টার অপু দে এবং ওয়ার্কিং গার্ড আব্দুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জাকের হোসেন চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্ত:নগর ট্রেন ঢাকাগামী তুর্ণা নিশিতা মঙ্গলবার ভোর রাত ২টা ৪৮মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে এগুতে থাকে। মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার জন্য লালবাতি জ্বালিয়ে সংকেত দেয়া হয়। অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ পথে তাকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেই।
তিনি জানান, ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার সময় ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অপরদিক থেকে আসা তুর্ণা নিশিতা ট্রেনের চালক সিগনাল (সংকেত) অমান্য করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালাতে শুরু করলে উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সঙ্গে তূর্ণা নিশিতার ইঞ্জিনের সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দুটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ৮ ঘন্টা পর লাইন সংস্কার শেষে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
এনএস/
আরও পড়ুন