ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বেনাপোল কাস্টম হাউসে স্বর্ণ চুরিতে ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ 

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:৫৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

যশোরের বেনাপোল কাস্টম হাউসের নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙ্গে প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ চুরির রহস্য উদঘাটন হয়নি গত চারদিনেও। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির হেফাজতে থাকা ৭ জনের কাছ থেকে কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। নতুন করে এ ঘটনায় আর কাউকে আটক করা হয়নি। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। 

এদিকে এ ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে বেনাপোল কাস্টম হাউসে তদন্ত শুরু করবেন আগামী রোববার।
 
কাস্টম সূত্র জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই টিমের নেতৃত্বে আছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (প্রশাসন) খন্দকার আমিনুর রহমান, সি আইসেলের যুগ্ন কমিশনার জাকির হোসেন, যশোরের পুলিশ সুপার মইনুল হক, বেনাপোল কাস্টম কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী ও বেনাপোল কাস্টমের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম। 

দুধর্ষ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে বেনাপোল পোর্ট থানাসহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বেনাপোলের বিভিন্ন স্থানে তদন্ত কাজ করছেন। তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলছেন আলাদা করে। 

স্থানীয় সূত্র বলছেন, বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী অতীতে এখানে এমন ভয়ঙ্কর চুরির ঘটনা ঘটেনি। লকারের কক্ষটি অত্যন্ত গোপনীয় এবং সেখানে দায়িত্বশীল ছাড়া কারো প্রবেশাধিকার নেই। কক্ষের চারপাশে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বলা হচ্ছে চোরেরা ঘরে প্রবেশের আগে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তারা গোপন কক্ষে ঢুকে লকার ও ভল্ট ভেঙে ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম সোনা নিয়ে যায়। এই চুরি দিনে না-কি রাতে হয়েছে তা কেউ বলতে পারেননি। না পারাটাই স্বাভাবিক, কারণ পারলে তো তারা চোরই ধরতে পারতেন। কাস্টমস হাউসের এই চুরি নিসন্দেহে দুঃসাহসিক। বুকের পাটা না থাকলে কারো পক্ষে ওখানে চুরি করতে যাওয়া সম্ভব না। তবে শুধু সাহস দিয়েই এই চুরি হয়েছে এমন কথা স্থানীয় লোকজন বিশ্বাস করতে পারছে না। এই চুরি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং দীর্ঘ পর্যালোচনার ফসল। এর সাথে ভেতরের লোক যুক্ত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। 

তদন্তকারী সংস্থা যদি বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করে তাহলে চোর ধরা খুব কস্টসাধ্য হবে বলে মনে হয় না। কারণ চুরি করতে হলে প্রথমে কক্ষটা চিনতে হয়, দ্বিতীয়ত লকার বা সিন্দুক কোথায় থাকে এবং তার ভেতরে কোথায় কী থাকে সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকতে হয়। এরপর ওই ঘরে পাহারাদার ও ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন পথে যাওয়া ও ফেরা যাবে তা নখদর্পণে রাখতে হয়। সিসি ক্যামেরা বিকল করতে কোথায় কীভাবে যেতে হবে তাও জানতে হয়। ভেতরে ভল্টে কোন সিকিউরিটি সাউন্ড আছে কি-না তাও জানতে হয়। আর এসব জানার জন্য ওই কক্ষের ভেতর বাহির মুখস্ত রাখতে হয়। কাজটি মোটেই সহজ নয়, এ কাজ করতে সেখানে বারবার যেতে হয়। কর্তব্যরতদের সাথে ঘনিষ্ট বিশ্বস্ত হতে হয়। এতগুলো কাজ করতে হলে অফিসের বিশেষ কারো ঘনিষ্ট অথবা নিজে অফিসের বিশেষ কেউ হতে হয়। চোরেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লকারটি ভেঙেছে। ওই লকারে দেশী-বিদেশী প্রচুর টাকা ছিল, সোনার দামী দামী গহনা ছিল। সোনার পরিমাণ ছিল ৩০ কেজি। ছিল মূল্যবান অনেক কিছুই। বারবার এমন সুযোগ মিলবে না জেনেও কেন চোর শুধুমাত্র ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম সোনা চুরি করলো? এর মধ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। তদন্ত কর্তাদের এদিকটা খতিয়ে দেখা দরকার। বলাতো যায় না কোন সূত্রে কী বেরিয়ে আসে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৮ ও ৯ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি ও ১০ নভেম্বর রোববার ঈদে মিলাদুন্নবীর সরকারি ছুটির কারণে কেউ অফিসে ছিল না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চোরেরা অফিসের ভোল্ট ভেঙ্গে ২০ কেজি সোনা চুরি করে নিয়ে যায়। চুরির ঘটনায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঘটনাস্থলে ডেপুটি কমিশনারের অফিস কক্ষ। ঝুলানো রয়েছে উচ্চ মতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা। তবে ক্যামেরায় কিছুই ধরা পড়েনি। কারণ ক্যামেরাটি সচল থাকলেও মূল মেশিন থেকে সেটি বিকল করা ছিল। কেন বিকল ছিল ? এমন প্রশ্ন অনেকের। এত নিরাপত্তা থাকার পরও চুরির ঘটনাটি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। এসব প্রশ্ন নিয়ে কাস্টম এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। থানায় মামলা হলেও আসামী অজ্ঞাত। ঘটনা তদন্তে বেনাপোল কাস্টমস এর যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে বলা হয়েছে আগামী সাতদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য। ৭ দিনের ৪ দিন পার হয়ে গেছে। পুলিশ বলছে ভোল্টের বিকল্প চাবি ব্যবহার করে সোনা চুরি করা হয়েছে। ভোল্টের চাবি কার কাছে থাকে সেটাও দেখার বিষয়। এছাড়াও ভোল্ট ইনচার্জ কাস্টমের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শাহাবুল সর্দার অল্প কয়েকদিন আগে বেনাপোল কাস্টম হাউজে যোগদান করেছেন।

বেনাপোল কাস্টমের ডেপুটি কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, পুরনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৪ স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি পেরিয়ে গোপনীয় একটি কক্ষের মধ্যে ভোল্ট ভেঙ্গে ৩০ কেজি সোনার মধ্যে ২০ কেজি সোনা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃওরা। ভোল্টে আরও সোনা, কোটি কোটি টাকার ডলার ও টাকা থাকলেও শুধু মাত্র ২০ কেজি সোনা নিয়ে যায় তারা। ভোল্ট ভাঙ্গার আগে দুর্বৃওরা সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ভোল্টে কাস্টম, কাস্টম শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধার করা সোনা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ মূল্যবান দলিলাদি ছিল।
 
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) সৈয়দ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘চুরির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সবাইকে যশোর ডিবি‘র হেফাজতে নেয়া হয়েছে। সেখানেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে’।

যশোর ডিবি পুলিশের ওসি মারুফ আহম্মদ জানান, বেনাপোল কাস্টম হাউজের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা সাহারুল সর্দার, সিপাহী পারভেজ, দৈনিক মুজুরিভিত্তিক পিয়ন টিপু সুলতান, আজিবর রহমান, মহাব্বত হোসেন, সুরত আলী ও আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। যা তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাবে না। যশোর থেকে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি দল বেনাপোল কাস্টম হাউসে স্বর্ণ চুরির ঘটনা তদন্ত করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত টিমের সদস্য পরিদর্শক (পিবিআই) কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, ‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি। খুব শিগগির চুরির রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করছি’। 

কেআই/আরকে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি