সুনামগঞ্জে আমনের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি
প্রকাশিত : ২১:৫৪, ২১ নভেম্বর ২০১৯
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার সহ বিভিন্ন উপজেলা জুড়ে আমন ধানের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ধানী মাঠ জুড়ে সবুজ আর সোনালী ফসলের ঝলকানির দৃশ্য এখন চোখে পড়ার মতো। জেলার উপজেলা গুলোতে বিকালে হালকা বাতাস, সকালে শিশির ভেজায় দুলছে রোপা আমন ধানের শীষ। কৃষকের চোখে সোনালী স্বপ্ন আর মুখে ফুটেছে হাসি। আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ছে ধানী মাঠের গ্রামে গ্রামে। বিভিন্ন উপজেলায় ধান কাটা শুরেু হলেও আর ক’টা দিন পরই শুরু হবে পুরো দমে ধান কাটার নবান্নের উৎসব। আর এ ফসল কাটার মহোৎসবে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন এলাকার কষক-কৃষাণীরা। শীতের সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত মাঠে-মাঠে ফসল কাটার চিরাচারিত দৃশ্য এখন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে দেখা যাচ্ছে। তবে শ্রমিক সংকটে ধান কাটা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।
একদিকে কৃষকরা ধান কেটে বাড়ির আঙ্গিনায় জড়ো করছেন। অপরদিকে মেশিন দিয়ে মাড়াই কাজ সম্পন্ন করছেন। মাড়াই কাছ শেষে বাতাসে ধান উড়িয়ে গোলায় তোলার কাজে ব্যস্ত এখন সবাই। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রোপা আমনের ভালো ফলন হয়েছে। রোগ বালাই ও পোকা-মাকড় দমন করায় ভালো ফলন হয়েছে প্রতিটি জমিতে। এ ধানের ফলন বিঘা প্রতি ১৩-১৫ মন ধান হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য ৭শ থেকে সারে ৭শত টাকা। তবে ধানের বাজার মূল্য কিছুটা বাড়িয়ে সরকারি উদ্যোগে সরাসরি কৃষক পর্যায়ে ধান কিনে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে কয়েকটি হাওর ঘুরে কৃষকরা এই প্রতিবেদককে জানান- প্রকৃত কৃষকেরা উপজেলা খাদ্য গুদামে মান সম্মত ধান নিয়ে গেলেও নানা অজুহাতে গেল বছর তাদের ধান রাখা হয়নি। কিন্তু দালালদের গুনগুত মান কম থাকা সত্ত্বেও তাদের ধান রাখা হয়েছে। এ বছর ন্যায্য মূল্যে সরকারী গুদামে ধান বিক্রি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশিষ্ট কর্মকর্তাসহ কৃষি মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা।
এছাড়া আমনের ভালো ফলন হলেও কৃষকরা পড়েছেন ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে মহা দুঃশ্চিন্তায়। জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, উপজেলায় এ বছর ৩ হাজার হেক্টরের উপর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়ে। এর মাঝে উফসি জাতের ধান ২৩শত হেক্টর ও দেশী জাতের ১২শত। বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে ব্রীধান-৫১,৫২,২৯,২৮,ও বি আর২২, দেশী জাতের বিরই ধান,গাইন্ড,চাপাশাল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৭হাজার ৬শত ৪০ মে:টন। জানাযায়, উপজেলার হাওরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে কৃষকেরা আমন ধান কাটা ও মাড়াই কাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি ধানের গোলা তৈরি করে নতুন ধান ঘরে তুলছেন সবাই। প্রতি ঘরে ঘরে চলছে নবান্নের নানা উৎসব। অগ্রহায়ণের প্রথম দিন থেকে কোনো কোনো জমিতে ধান কাটতে শুরুকরেছেন কৃষকেরা। এবার বেশি পরিমাণে ভাল ফলন হয়েছে বীনা ১৭ ও ইরি-৪৯ নম্বর বীজের ধান। গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেশি ফলন হয়েছে এবার।
কৃষকরা জানান, এবার পরিমাণ মত বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে ধান গাছে পোকায় তেমন আক্রমণ করতে পারেনি। সময়মত ধান গাছ বড় হয়েছে এবং শীষে ধানের পরিমাণ বেশি হয়েছে। এসব ধানের জাতের মধ্যে ফলন বেশি পরিমাণে ভাল হয়েছে বীনা-১৭ নামের আমন ধানের ফসল। এই জাতের ধান প্রতি কেয়ারে ১৭ থেকে ১৮ মণ উৎপন্ন হবে। উপজেলার পশ্চিম বীরগাও ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এ বছর আমি ৭ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। এতে প্রায় ২৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ কম হওয়ায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি প্রায় ১৬০-১৭০ মন ধান পাবো। ফলন ভালো হওয়ায় আমি খুব খুশি।
পূর্ব বীরগাও ইউনিয়নের হাসকুঢ়ী গ্রামের চাষী আবুল কাশেম বলেন, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দৈনিক ৩-৪শ টাকা মজুরিতেও মিলছেনা ধান কাটার শ্রমিক। যারা আগে ধান কাটার জন্য দিন মজুরের কাজ করত তারা অনেকে এখন ঢাকায় গার্মেন্স কাজ ও রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। ফলে বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভাল থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। গত ২-৩ বছরের তুলনায় এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে উপজেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষককে ধান ঘরে তুলতে একটু হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল বলেন, জামালগঞ্জে আমনের ভাল ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ বিভিন্ন গ্রামে খুঁজ নিয়ে প্রকৃত আমন চাষিদের তারিকা তৈরী করেছেন, তাদরে কাছ থেকেই সরকারী ভাবে ধান ক্রয় করা হবে।
আরকে//
আরও পড়ুন