ঢাকা, বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

নিরবেই কাটছে হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

৬ ডিসেম্বর, বিখ্যাত মরমী সাধক হাসন রাজার ৯৭ মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জন্মস্থান সুনামগঞ্জ শহরে উল্লেখ করার মতো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। ফলে অনেকটা নিরবেই কাটছে এ গুণী সাধকের মৃত্যুবার্ষিকী। 

এখন পর্যন্ত পারিবারিক কিংবা সরকারিভাবে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। হাওর-বাওর ও মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের জেলা সুনামগঞ্জ ‘হাসন রাজার দেশ’হিসাবেই পরিচিত। 

প্রতিবছর সরকারি পৃষ্টপোষকতা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত, মরমী গীতিকবি দুর্বিন শাহর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলেও, হাসন রাজার জন্ম অথবা মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়নি। 

কিন্তু মরমী এই সাধকের জীবন ও দর্শন কিংবা তার গানের চর্চা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখানে হয় না বললেই চলে। হাসন রাজার মৃত্যু বা জন্মতারিখ ঘিরে এখানে লালন মেলার মতো সরকারি পৃষ্টপোষকতা হাসন মেলারও দাবি রয়েছে স্থানীয়দের। 

এদিকে, জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে ২১ ডিসেম্বর চার লোক কবিকে নিয়ে সম্মরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাবেল।

‘মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে কান্দে হাসন রাজা মন মনিয়া রে’, ‘একদিন তোর হইব রে মরণ রে হাসন রাজা’, ‘রঙের বাড়ই রঙের বাড়ই রে’, লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালানা আমার’, আগুণ লাগাইয়া দিলও কুনে হাসন রাজার মনে’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে’, ‘প্রেমের বান্ধন বান্ধরে দিলের জিঞ্জির দিয়া, ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে, মৌলার হাতের ডুরিসহ জনপ্রিয় অসংখ্য গাণের বিখ্যাত মরমী সাধাক এই হাসন রাজা ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ ১২৬১)  সুনামগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী সুরমা নদীর তীরে লক্ষণশ্রী পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে ধনাঢ্য জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই মরমী কবি।

তিনি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রী আর সিলেটের একাংশ নিয়ে পাঁচ লাখ বিঘার বিশাল অঞ্চলের জমিদার ছিলেন মরমী গীতিকবি হাসন রাজা। পিতা ও মাতা উভয়ের কাছ থেকে পাওয়া বিশাল জমিদারীর মালিকানা চলে আসে কিশোর বয়সে তার হাতে।

বেহিসাবি সম্পদ আর ক্ষমতার দাপটে বেপরোয়া জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। জাগতিক লোভ লালসা, ক্ষমতায়ন, জবরদখল করেও তার প্রতিপত্তি বাড়ানোর  কাজে প্রবৃত্ত ছিলেন এই প্রবল পরাক্রমশালী জমিদার। 

কিন্তু এক সময় তার ভেতরের ভ্রান্তি ঘুচে যায়। তিনি তার সম্পদ জনকল্যাণের জন্য উইল করে দিয়ে কয়েকজন সঙ্গিনীকে নিয়ে হাওর-বাওরে  ভাসতে থাকেন। 

আর এর মধ্যে খুঁজতে থাকেন সেই মহা পরাক্রমশীলকে। সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আবিষ্কার করেন, তার নিজের মধ্যেই তার বাস। সৃষ্টিকর্তার প্রেমে পাগল হাসন রাজা সেই সময় থেকেই নিজের সৃষ্টি গান গেয়েই বিখ্যাত হয়েছেন দেশে-বিদেশে। 

হাসন রাজার গানের মাঝে অন্তর্নিহিত রয়েছে নশ্বর জীবন। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তার রচিত ২০৬টি গান নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। এই সংকলনটির নাম ছিল ‘হাসন উদাস’। এর বাইরে আর কিছু গান ‘হাসন রাজার তিনপুরুষ’ এবং আল ইসলাহ্সহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। 

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীতে মায়ের কবরের পাশে কবর দেয়া হয় তাকে। তার এই কবরখানা তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নিজে প্রস্তুত করেছিলেন। মরমী এই সাধকের সৃষ্টিকর্ম ধরে রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভক্তরা।

হাসন রাজার প্রপৌত্র সাবেক সংসদ সদস্য দেওয়ান শাসছুল আবেদীন বলেন, হাসন রাজার প্রতি কতৃপক্ষের নজড় না থাকায় হাসন রাজা অবহেলিত হয়ে আছেন। বাংলাদেশের লোককবি হিসেবে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো সেটা কেউ দেখছেন না। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনা করে এবং যার যেটুকু মর্যাদা, তার সেটুকু দেওয়া উচিত। 

তিনি আরো বলেন,‘বঙ্গবন্ধু হাসন রাজা একাডেমি করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুদান দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর হাসন রাজা মিউজিয়ামের কাজ স্থগিত হয়ে যায়, আমরা আশা করছি, বঙ্গবন্ধুর কন্যা এই কাজটি করবেন।

হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি কোনো অনুষ্ঠান নেই, তবে পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে ছোট আকারে ভক্তবৃন্দদের নিয়ে গানের মধ্যে দিয়ে তাকে স্মরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী এবং ২১ ডিসেম্বর জন্মবার্ষিকী। তাই একই মাসে জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকী হওয়াতে একসাথে জেলার চার লোককবি রাধারমণ দত্ত, শাহ আব্দুল করিম, দুর্বিন শাহ ও হাসন রাজার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে নানান কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। হাওর অঞ্চলের এই প্রধানতম লোক শিল্পীদের  স্মরণ করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। 

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি