ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সরাইলে ভূমিহীনের ঘরবাড়ী দখল 

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২২:৫১, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

“স্যার, এইখানে আমার ঘর ছিল। ঘরের পাশে আমার ডোবাতে মাছ ছিল। মুখলেছ বাহিনী আমার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আমার ডোবার মাছ ধরে ২ লক্ষ টাকা বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আবার ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে আমার জায়গা ভরাট করে ফেলতেছে। তারা আমার জায়গায় আমাকে আসতে দেয় না। আমারে হুমকি দিছে মাইরালাইব। স্যার, আপনেরা কইন, আমি কই গেলে বিচার পামু -” একথা বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ভূমিহীন আসাদুল্লাহ। 

ভূমিহীন আসাদুল্লাহর এই করুণ আর্তনাদ গণমাধ্যম কর্মীদের কপোল সিক্ত করে। আসাদুল্লাহর বাড়ী সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামে। তার বাবার নাম আলী আকবর। সে একজন প্রকৃত ভূমিহীন। ২০০৮ সালে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দা নাহিদা হাবিবা শোলাকান্দি মৌজার ৬৪৯ ও ৮৩৪ নং দাগ থেকে আসাদুল্লাহকে ৫২ শতক জায়গা ৯৯ বছরের জন্য তাকে বন্দোবস্ত বুঝিয়ে দেয়। ভূমিহীন আসাদুল্লাহ তার লীজকৃত জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে এবং তার ডোবাতে মাছ চাষ করে ভোগ দখল করে আসছিল। এর মধ্যে এলাকার প্রভাবশালী মোখলেছ মিয়ার নেতৃত্বে ভূমিদস্যু একটি অসাধু চক্র মিলে নিরীহ আসাদুল্লাহর ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে যায় এবং সেলু মেশিনে সেচে তার ডোবায় থাকা দুই লক্ষাধিক টাকার মাছ মেরে বাজারে প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়। লুটের রাজ্যে চরম অসহায় ভূমিহীন আসাদুল্লাহ তার ভূমি ও মাছের ক্ষতিপূরণ ফিরে পেতে ন্যায় বিচারের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে বারে বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পৌঁছে না। লুটেরা দলের সদস্য তাজুল ইসলামের ছেলে আক্কাছ মিয়া, হাজী মাঞ্জু মিয়ার ছেলে আ: জব্বার, সমসু মিয়ার ছেলে এনামুল হক, এন্তা মিয়ার ছেলে আলী মিয়া 

ভূমিহীন আসাদুল্লাহকে ভিটেছাড়া করেই ক্ষান্ত হয়নি উপরন্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে অরুয়াইল ব্রীজের নিচ থেকে বালু উত্তোলন করে অসহায় আসাদুল্লাহর পুরো জায়গাটি দখলে নিতে ভরাট করে ফেলছে। অথচ জায়গাটিতে হাইকোর্টের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে মুখলেছ বাহিনী এলাকায় একের পর এক রামরাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনও ভূমিহীন আসাদুল্লাহর সাথে যেন বৈরী আচরণ করে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক যেখানে আসাদুল্লাহকে ভূমিহীন হিসেবে দুটি দাগে মোট ৫২ শতাংশ জায়গা লীজ দিয়েছে, সেখানে সরাইল উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএসএম মোসা মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরও ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর কোন কারণ উল্লেখ ছাড়াই এক পরিপত্রের মাধ্যমে শুধু মাত্র ৮৩৪ দাগের নাল ভূমিটি বাতিল করে দিয়েছে যা রহস্যজনক। এ বিষয়ে সরাইল থানার ওসির কাছে রিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি অসহায় আসাদুল্লাহ।

তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এএস এম মোসা দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে কথাবলা সম্ভব হয়নি। ভূমিহীন আসাদুল্লাহ এখন তার লীজকৃত জায়গা জমি, বসত ঘর, মাছের ক্ষতিপূরণসহ পুরো ভূমি ফিরে পেতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি