শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত
প্রকাশিত : ১৮:০২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত
১৬ ডিসেম্বর, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে বুকের তাঁজা রক্ত ঢেলে পাক হানাদারদের এ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করে বাঙালি জাতি। স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন এক রাষ্ট্রের।
দিনটি এ জাতির জন্য যতটা না আনন্দের, তার চেয়ে হাজারগুণে বেদনার। কত আপনজনের রক্তের স্রোতে ভেসে গেছে কত শত লাশ। তাইতো প্রতিবছর কৃতজ্ঞ এ জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এবারও তার ব্যাত্যয় হয়নি। যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয়ের দিনটি পালন হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের বর্জনের মধ্যদিয়ে এবারও সারাদেশে অশ্রু সিক্ত নয়নে মহান বিজয় দিবস পালন করেছে গোটা বাঙালি জাতি। শুধু দেশ নয়, বিদেশেও পালিত হয়েছে দিবসটি। একুশে টেলিভিশনের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে সারাদেশে পালিত বিজয় দিবসের চিত্র তুলে ধরা হলো-
গাজীপুর: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করা হয়। শুরুতে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জেলা শহরের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, প্রেসক্লাব, টেলিভিশন সাংবাদিক ক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করা হয়। এর আগে সকালে শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা: ভোরে কুমিল্লা টাউনহল সংলগ্ন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তোপধ্বনীর মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা করা হয় এ জেলায়। সকাল সাড়ে ৬টায় কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরে নগরীর সিটি পার্কে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে, শহীদ এ কে এম সামছুল হক ও শহীদ মুন্সী কবির উদ্দিনের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এছাড়া, বিজয় দিবসকে ঘিরে সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক বাসভবনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও বিকাল ৩টায় বিজয় র্যালি, সন্ধ্যায় আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন।
ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের বীরত্বের অবিস্মরণীয় গাঁথা মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজন করা হয় ৫ দিনব্যাপী বিজয় উৎসব।
দিবসের প্রথম দিনে সোমবার কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠিত হয়েছে যাত্রাপালা ‘রক্তে কেনা স্বাধীনতা’। নাট্যকর্মী সরোয়ার জাহান বাদশা’র রচনা ও পরিচালনায় যাত্রাপালা পরিবেশন করেন, ‘অনিকেত’ যাত্রাদলের শিল্পীরা। অভিনয় দেখতে ভীড় করেন শত শত মানুষ।
নরসিংদী: যথাযথ মর্যাদায় এ জেলায় পালিত হয়েছে মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সকালে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দিবসটি উপলক্ষে নরসিংদী জেলা ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগ পৃথক বিজয় র্যালি বের করে। জেলা আওয়ামী লীগের র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে জেলা আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। একই কর্মসূচি পালন করে মাধবদী শহর আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, মোসলেহ উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন ও পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং প্যারেড ও কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সাতক্ষীরা: বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে প্রত্যুষে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হয়।
এরপর সূর্য্যদয়ের সাথে সাথে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযোদ্ধাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত, পুলিশ, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রর্দশনী, রক্তদান কর্মসূচি, চিত্রাঙ্কান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক চলচিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের সংবর্ধনা, সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আলোচনা সভা,পুরষ্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।
বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতিক পায়রা উড়িয়ে মহান বিজয় দিসের উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
এসময় সেখানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাদেকুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বদিউজ্জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগ সাতক্ষীরা হুসাইন শওকত, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস.এম আফজাল হোসেন, পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ।
শেরপুর: মহান বিজয় দিবসে ভোরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ।
এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভে মানুষের ঢল নামে। রাষ্ট্রের পক্ষে প্রথমে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি।
এরপর জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব, পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বহী কর্মকর্তা এ জেড মোর্শেদ আলী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া শহীদ বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আ’লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শেরপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, প্রেসক্লাব, সাংবাদিক বিপ্লবী রবি নিয়োগী সভাকক্ষ পরিচালনা পর্ষদ, মহিলা পরিষদ, জেলা জুয়েলার্স সমিতি, শেরপুর ডায়াবেটিক সমিতি, পাতাবাহার খেলাঘর আসর, শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা ও উদীচীসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে ৩০ লাখ শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এদিকে, সকাল সাড়ে ৮টায় স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে কুচকাওয়াজ ও মনোজ্ঞ শারীরিক কসরত অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের স্কাউট, গার্লস গাইড, রোভার, বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা অংশগ্রহণ করেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে শহরের রঘুনাথ বাজার থানা মোড়ে শেরপুর জেলা রক্তদান সমাজ কল্যাণ সংস্থার উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও রক্তদান কর্মসূচিরর আয়োজন করা হয়।
এছাড়া, শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সিরাজগঞ্জ: ৭১-এর স্বাধীনতা বিজয়ের ৪ যুগপুর্তীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নানা আয়োজনের মধ্যেদিয়ে সিরাজগঞ্জ বিজয় দিবস পালিত হয়েছে।
শহরের মুক্তির সোপানের বিজয় স্তম্ভে শ্রেষ্ঠ বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির দিয়ে জেলা প্রশাসনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়।
পরে জেলা পরিষদ, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা উইনিট কমান্ডসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রেসক্লাব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবিদের সংগঠন সহ সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
টাঙ্গাইল: নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ জেলায় বিজয় দিবস পালিত হয়েছে। সূর্য্যদয়ের সাথে সাথে সরকারি বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, তোপধ্বনি ও জেলা সদরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
শুরুতেই জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ জেলা সদরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর একে একে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, প্রেসক্লাব, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনতা শহীদ স্মৃতিস্তবে পুস্পস্তবক অর্পণ করে। পরে টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
এআই/এনএস
আরও পড়ুন