রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা লতিফ মির্জার নাম
প্রকাশিত : ১৪:৩০, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকায় ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ বেসরকারি যুব কমান্ড ‘পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের’ সর্বাধিনায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক মির্জা আব্দুল লতিফের নাম রয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জে ও তার জন্মস্থান উল্লাপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষ বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এই তালিকা প্রকৃতই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের তৈরি নাকি কোনও ষড়যন্ত্র তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এ অঞ্চলে বেসামরিক বাহিনী হিসেবে পরিচিত ‘পলাশডাঙ্গা যুব শিবির’ ছিল পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদরদের আতঙ্ক। মির্জা আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মুক্তিযোদ্ধারা তাড়াশের নওগাঁয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ করে। ’৭১ এর ১১ নভেম্বর যুদ্ধে ১৫/১৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ক্যাপ্টেন সেলিম নামে একজন পাকসেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে মুক্তিযোদ্ধারা। এই শিবিরের মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০০। নওগাঁর যুদ্ধে গ্রেফতার হওয়া সেলিমকে পরে মির্জা আব্দুল লতিফ গুলি করে হত্যা করে।
উল্লাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজাকারের তালিকায় মির্জা আব্দুল লতিফের নাম প্রকাশের প্রতিবাদে আজ বুধবার শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়।
মির্জা আব্দুল লতিফ দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্যানেল স্পিকার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
রাজাকারের তালিকায় মির্জা আব্দুল লতিফের নাম থাকার বিষয়ে লতিফ মির্জার মেয়ে সেলিনা মির্জা মুক্তি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি এবং তার পরিবার এই তালিকা দেখে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন।
মুক্তি বলেন, রাজাকারের তালিকায় মির্জা আব্দুল লতিফের নাম প্রকাশ গোটা জাতির জন্য অসম্মানজনক। এটা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ভুল নাকি কোনও ষড়যন্ত্র তা খতিয়ে দেখা উচিত।
মির্জা আব্দুল লতিফ যদি রাজাকার হন তাহলে বাংলাদেশেই অবৈধ হবে। তিনি এই ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ভুল হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।
মুক্তি মির্জা সিরাজগঞ্জের সব মুক্তিযোদ্ধার কাছে তার প্রয়াত পিতার এই অবমাননার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে অবিলম্বে প্রকাশিত রাজাকার তালিকা সংশোধনের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খোরশেদ আলম ও অপর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা জানান, রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা মির্জা আব্দুল লতিফের নাম থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। তারা ইতোমধ্যেই এর প্রতিবাদে মিছিল ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
সাবেক কমান্ডার খোরশেদ আলম বলেন, তাদের তৈরি করা তালিকার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকার কোনও মিল নেই। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত।
সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গাজী সফিকুল ইসলাম শফি বলেন, লতিফ মির্জার নেতৃত্বে পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবির পরিচালিত হয়েছে। এই বাহিনীর সঙ্গে পাক হানাদারদের কয়েকটির সন্মুখ যুদ্ধ হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং লতিফ মির্জা অথচ তার নাম রাজাকারের তালিকায় কীভাবে থাকে? এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বুঝতে হবে তালিকা প্রকাশের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধীরা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আজ বুধবার মুক্তিযোদ্ধাদের মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা তালিকাটি প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম ঢোকায় তা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে। তাই রাজাকারের এই তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একে//
আরও পড়ুন