ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

রোটারি গভর্নর (২০২২-২৩) নির্বাচন

জয়ের ব্যাপারে ৪ গভর্নর প্রার্থীই আশাবাদী

রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ

প্রকাশিত : ২৩:৪১, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল। শিকাগোর মার্কিন অ্যাটর্নি পল পি হ্যারিস ১৯০৫ সালে বিশ্বের অন্যতম এ প্রাচীন সেবাধর্মী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ গঠন, বিশ্বব্যাপী ফেলোশীপ প্রদানের মহান ব্রত নিয়ে আদর্শ সেবা প্রদানকল্পে এ প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন। প্রতিষ্ঠালগ্নে এটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসেসিয়েশন অব রোটারি ক্লাবস্ নামে পরিচিত ছিল। ১৯২২সালে এর নামকরণ করা হয় রোটারি ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি রোটারি ক্লাব নামে পরিচিত। 

বর্তমানে বিশ্বের দু’শতাধিক দেশে এ সংস্থার ১.২২ মিলিয়নেরও বেশি সদস্য আছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী সেবামূলক প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ১৯২৮ সালে গঠন করে রোটারি ফাউন্ডেশান।এর অর্থায়নে বিদেশে পড়াশোনার জন্যে বৃত্তি, মানবধর্মী প্রকল্পে অর্থবরাদ্দ ও রোটারিয়ানদের বিদেশ সফরে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৩৭ সালের ২২ডিসেম্বর ঢাকায় রোটারি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মাত্র ৮৮জন ডিস্ট্রিক্ট সদস্য নিয়ে পরবর্তী বছরের ২৬ফেব্রুয়ারি সনদপ্রাপ্ত হয়।রোটারির মুল উদ্দেশ্য হল, `নিজের থেকে সেবা ওপরে’ (Service above self), অন্যদিকে রোটারি ফাউন্ডেশানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, “Doing good in the world.” অর্থাৎ “বিশ্বে ভালোকিছু করা।” 

রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও স্থানীয় ক্লাবগুলোর যৌথ অর্থায়নে রোটারি ক্লাবগুলো উন্নয়ন ও সেবামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ক্লাবগুলো একক, যৌথ কিংবা উভয়ভাবে পরিচালনা করে।এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা, উন্নয়নের উদ্যোক্তা ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবেও ক্লাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।শতোবছরের বেশি সময় ধরে এ সংস্থা বিশ্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,দারিদ্র্যবিমোচন,শান্তিপ্রতিষ্ঠাসহ জনহিতকর নানান মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।বিশেষকরে রোটারি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়া ছাড়া বিশ্বের সকল দেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে। পোলিওমুক্ত বিশ্ব গড়তে রোটারির ১২লাখ সদস্য ও ২কোটি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে যাচ্ছেন। 

রোটারি ক্লাবে প্রতিবছর ১জুলাই থেকে নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়। ক্লাব সভাপতি থেকে শুরু করে ডিস্ট্রিক গভর্নর পর্যন্ত সকলকে একবছরের বেশি (১জুলাই-৩০জুন)দায়িত্বপালন করার সুযোগ নেই।গণতন্ত্রের বাস্তব প্রয়োগ ও চর্চা বলতে যা বোঝায়- তা এখানে শতোভাগ অনুসরণ করা হয়।রোটারির মতো বিশ্বে এমন সমাজসেবী সংগঠন দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয় না। নির্বাচিত হওয়ার পর এ সংগঠনের গভর্নরকে দেশ-বিদেশে আড়াই বছর প্রস্তুতিমূলক নানান প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।এ দীর্ঘসময় প্রস্তুতিপর্ব শেষ করে নতুন গভর্নর দায়িত্বপালন করেন মাত্র একবছর।গভর্নর পদের মেয়াদ ন্যুনতম ২বছর হওয়া উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

আগামী ৩ ও ৪ জানুয়ারি ২০২০ সিলেটের কুশিয়ারা কনভেনশন সেন্টারে রোটারি ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২ এর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।এ সম্মেলনে ২০২২-২৩ মেয়াদের জন্যে ভোটের মাধ্যমে গভর্নর নির্বাচন করা হবে।এ নির্বাচনে ১৬৬ ক্লাবের ২৬০জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।গভর্নর পদে প্রার্থী ৪জন।তাঁরা হলেন, রোটারি ক্লাব অব চিটাগং ইস্ট এর অতীত সভাপতি, চট্টগ্রাম আইন কলেজের অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, রোটারি ক্লাব অব চিটাগং রিভার শাইন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রোটারিয়ান রুহেলা খান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহিলা কলেজের শিক্ষক (মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান), শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রত্নাগর্ভা মা রোটারিয়ান ফাতেমা জেবুন্নেসা ও রোটারি ক্লাব অব সিলেট সেন্ট্রাল এর অতীত প্রেসিডেন্ট, সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির প্রেসিডেন্ট ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান জিয়াউল হক।

চার গভর্নর প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতোভাগ আশবাদী।কেন তাঁরা গভর্নর পদে প্রার্থী হয়েছেন, রোটারিতে তাঁদের অবদান কী, আর্ত-মানবতার জন্যে তাঁরা কী কী কাজ কাজ করেছেন, নির্বাচিত হয়ে কী করবেন এবং জয়ী না হলে কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে কি না-এমনসব প্রশ্ন করা হয় চারপ্রার্থীর কাছে।প্রথমে মুঠোফোনে গভর্নরপ্রার্থী রোটারিয়ান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সাথে কথা হয়।তিনি বলেন, “আমি যদি নির্বাচিত হই, তাহলে রোটারির খরচ কমিয়ে ওই টাকা মানবতার জন্যে ব্যয়ের উদ্যোগ নেবো।।আমি কাজে বিশ্বাসী, ভণ্ডামি পছন্দ করি না। রোটারির বাইরেও আমি বিশাল সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি।আমার প্রস্তাবে রোটারি ডিস্ট্রিক্ট এর চলমান ব্যাংকহিসাব চালু করা হয়েছে। আগে পুরোনো গভর্নর ব্যাংকহিসাব বন্ধ্ করে দিতেন এবং নতুন গভর্নর আবার ব্যাংকহিসাব খোলতেন।এখন আর তা করতে হয় না।শুধু হিসাব অপারেটরের স্বাক্ষর পরিবর্তন হয়।রোটারি ক্লাবের জন্যে কী কী কাজ করেছি- সম্মানিত সচেতন ভোটারেরা তা ভালো করেই জানেন।আমরা যারা গভর্নরপ্রার্থী হয়েছি, ক্লাব ও ক্লাবের বাইরে হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে কার কী অবদান তা-ও সকল ভাটোরের কাছে পরিস্কার।তাই, আমি মনে করি, আমার রোটারিয়ান ভোটারেরা সকলেই সমাজের আলোকিত মানুষ।বিবেক-বুদ্ধির আলোকেই তাঁদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।গতবারও আমি প্রার্থী ছিলাম, জয়লাভ করতে না পারলেও আমার রোটারি কর্মকাণ্ডে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি; এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।”

গভর্নরপ্রার্থী রোটারিয়ান রুহেলা খান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাটগাঁরবাণীডটকমকে প্রশ্নোত্তরে জানান, “আমার ক্লাবের সম্মানিত সদস্যদের আগ্রহে ও বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার লক্ষ্যে আমি গভর্নরপ্রাথী হয়েছি।ক্লাবের বুলেটিন এডিটর থেকে শুরু করে অ্যাসিট্যান্ট গভর্নর, ডেপুটি গভর্নরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি।বেস্ট প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি-প্রেসিডেন্ট, বেস্ট অ্যাসিট্যান্ট ও ডেপুটি গভর্নর হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত হয়েছি।ক্লাব ছাড়াও ব্যক্তিভাবেও সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্যে সাধ্যমতো অবদান রেখে আসছি।গভর্নর পদে নির্বাচিত হলে সকলের সাথে মিলিমিশে আর আই এর নিয়মনীতি অনুসরণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে রোটারি কার্যক্রম পরিচালনা করবো।অতীত থেকে ক্লাবের জন্যে যেভাবে কাজ করে আসছি, নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারলেও তাতে কোনো ছন্দঃপতন হবে না।”

আরেক গভর্নরপ্রার্থী কলেজশিক্ষক রোটারিয়ান ফাতেমা জেবুন্নেসা বলেন, “যদি গভর্নর নির্বাচিত হই তাহলে কোনো চক্রান্ত ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব নয়, ফ্রেন্ডশিপ ও ফেলোশিপ এর মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে রোটারি কার্যক্রম পরিচালনা করবো।ব্যক্তিগত ইচ্ছে-অনিচ্ছের ওপর নয়, রোটারি ইন্টারন্যাশানালের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে রোটারি ক্লাব পরিচালনা করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো।নির্বাচনে যদি কোনো কারণে জয়লাভ না-ও করি, অতীতে যেভাবে রোটারির জন্যে কাজ করেছি ভবিষ্যতেও একইভাবে দায়িত্বপালন করে যাবো।”

গভর্নরপ্রার্থী রোটারিয়ান জিয়াউল হক মুঠোফোনে চাটগাঁরবাণীডটকমকে বলেন, আমি রোটারি ক্লাব অব সিলেট সাউথ এর সভাপতি, অ্যাসিসট্যান্ট গভর্নর, এরিয়া এডভাইজার, এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর, গভর্নর’স এড্, ডিস্ট্রিক্ট মেম্বার ডিটেনশান কমিটি চেয়ার, ডিস্ট্রিক্ট ট্রেজারার, ডেপুটি গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ট্রেনিং সেমিনার ২০১৯ এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। রোটারির কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যক্তিভাবে আমি বিভিন্নভাবে অবদান রাখার চেষ্টা করছি।রোটারি ছাড়াও দীঘদিন ধরে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে আসছি।রোটারি যেহেতু একটি সেবাধর্মী আন্তর্জাতিক সংগঠন, তাই সেবাদানের পরিধি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে গভর্নরপ্রার্থী হয়েছি।সম্মানিত ভোটারেরা এ পদে আমাকে যদি যোগ্য মনে করেন, তাহলে অবশ্যই তাঁরা তাঁদের সমর্থন আমার অনুকূলে দেবেন।জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।তবে নির্বাচনে জয়ী না হলেও আমি সেবামূলক কার্যক্রমের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিজয়ীপ্রার্থীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

গভর্নরপ্রার্থী ৪জন হলেও খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে রোটারিয়ান জাহাঙ্গীর ও রোটারিয়ান রুহেলার মধ্যে।হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কে জিতবেন- তা এ মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।৩ ও ৪ জানুয়ারি ২০২০ সিলেটের কুশিয়ারা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে কোন্ গভর্নপ্রার্থী বিজয়ের শেষহাসি দেন তা দেখার অপক্ষোয় রোটারিয়ানেরা।

লেখক-প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী ও চাটগাঁরবাণীডটকম

আরকে//

 


 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি