ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বোরো জমি আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সুনামগঞ্জের কৃষকরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:৩৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার হকনগর সুইসগেইট পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির আওতায় এ বছর বোরো চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সুইসগেইট পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির চরম উদাসিনতার কারণে পানির অভাবে এ বছর হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

বর্তমানে বোরো চারা উৎপাদনের ভরামৌসুমেও পানি পাচ্ছে না এখানকার কৃষকরা। গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) এলাকাজুড়ে মাইকিং করে ঘোষণা করা হয়- সুইসগেইটের ক্রটিজনিত কারণে এ বছর বোরো চাষাবাদে সেচের পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। সমিতি কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণায় সীমান্ত এলাকার কৃষকরা এখন চরম হতাশায় ভুগছেন। 
 
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, বোরো মৌসুম শুরুর আগেই ড্রেন ও বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় মৌলা নদীর উজানের পানি সরবরাহ করে বোরো চাষাবাদ এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পানি না পেয়ে কৃষকদের বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় এ নিয়ে এলজিইডি ও পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। নানা অজুহাত ও কারণ দেখিয়ে তারা এখন দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। 

তবে হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, ৬ মাস পূর্বেই ড্রেন সংস্কার ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হলেও এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্টরা। ফলে চলতি বছর কৃষকদের পানি সরবরাহ আদৌ সম্ভব হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি।  

জানা যায়, ২০০৪ সালে সীমান্ত এলাকার কৃষকদের বোরো চাষের আওতায় নিয়ে আসতে স্থানীয় সরকার বিভাগ দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের হকনগর মৌলা নদীতে একটি সুইসগেইট নির্মাণ করে। সুইসগেইট নির্মিত হওয়ার পর থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাঁশতলা, কলোনী, জুমগাঁও, পেকপাড়া, মৌলারপাড়, আলমখালী, নতুন বাঁশতলা, চৌধুরীপাড়াসহ অন্তত ৭/৮টি গ্রামের কৃষকরা ওই নদীর পানি দিয়ে বোরো চাষসহ মৌসুমী সবজি চাষ করে আসছিলেন। 

সুইসগেটের আওতায় প্রায় তিন সহস্রাধিক কৃষকদের মধ্যে পানি সম বন্টনের জন্য শুরু থেকে ‘হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’ সার্বিক দেখাশুনা করে আসছে। সমিতির আওতাভুক্ত বর্তমানে ৪১৪ জন সদস্য রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ২০ টাকা করে সমিতির তহবিলে জমা দিতে হয়। সমিতি কর্তৃপক্ষ নিয়মিত সঞ্চয়ের টাকা সদস্যদের কাছ থেকে উত্তোলনও করছেন। সদস্যদের সঞ্চয়ের ওই টাকা হতে উপকারভোগী সদস্যদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ঋণ বিতরণ করার নিয়ম থাকলেও প্রকৃত উপকারভোগীরা ঋণ পাচ্ছে না বলে কৃষকদের অভিযোগ রয়েছে।

সমিতির দায়িত্বশীলদের অনেকেই সিন্ডিকেট করে নিজেদের বলয়ে তাদের খেয়াল খুশি মতো ঋণের টাকা বিতরণ করেছেন বলে কৃষকরা জানান। এছাড়া সমিতির কাছে এ যাবত কৃষকরা তাদের সঞ্চিত টাকার কোনো হিসাব-নিকাশ পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরেই সমিতির দায়িত্বশীলদের এমন স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিবছরই কৃষকদের চরম ভোগান্তি এবং সংকটে পড়তে হয়। 
 
এ ব্যাপারে চৌধুরীপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমান মাস্টার বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির নামে অর্থ লুটপাট হচ্ছে। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে ডেনেজ নির্মাণ করার পরও কৃষক পানি পাবে না তা মেনে নেওয়া যায় না। এবছর পানি না পেলে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো।

সমিতির সদস্য মোস্তফা গাজী জানান, সমিতির শুরু থেকে এ যাবত কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। হিসাব চাইলে সমিতির সভাপতি গড়িমসি করেন। তার নেতৃত্বে সমিতির অর্থ লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

এ ব্যাপারে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমার কাছে সমিতির অর্থনৈতিক কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। সবই সভাপতি জানেন। আর ড্রেন সমস্যা দূরীকরণে আমরা স্থানীয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে অনেক আগেই অবহিত করেছি। তারা সরজমিন পরিদর্শনও করেছেন। কিন্তু বোরো মৌসুম শুরুর পূর্বে তা সমাধান না করায় এবার বোরো মৌসুমে কৃষকদের পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। 

তবে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে হকনগর পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেছেন, প্রায় ১ লাখ টাকা আমার হাতে আছে, আর বাকী টাকা সমিতির তহবিল ব্যাংকে জমা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ড্রেন সমস্যা থাকায় এ মৌসুমে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। 

সমিতির নানা অনয়িম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মৈত্রেয়ী আচার্য্য বলেন, হকনগর সমিতির অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আমি ইতিপূর্বে অবগত হয়েছি, তবে এর সত্যতা খতিয়ে দেখা হয়নি।

এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সাদিরুল ইসলাম বলেন, হকনগর সুইচগেটের ড্রেন সংস্কারের ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো চাহিদা পাঠানো হয়নি। জুন মাসের পূর্বে চাহিদা প্রেরণ করা হলে হয়তো এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতো।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি