তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে
প্রকাশিত : ১৫:৩৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯
হাওরের জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক জনসাধারণের চিকিৎসা জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করলেও ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ জন নতুন চিকিৎসককে পদায়ন করা হলেও এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসক দ্রুত বদলি হওয়ায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় যে শূন্যতা ছিল তার অবসান হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।
এদিকে হাসপাতালের ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবাল হোসেন রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট নিয়ে সরকারি হাসপাতালটিকে প্রাইভেট প্রাকটিসের স্থল বানিয়েছেন। হাসপাতালে রোগী দেখতে কোন ফি নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি প্রতি রোগীর কাছ থেকে ভিজিট হিসেবে ৫শ’ টাকা হারে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া সরকারি ডাক্তার ইকবালের বিরুদ্ধে টাকা না দিলে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, নিয়মিত অফিস না করে সপ্তাহের ৪ দিনই পরিবারের সঙ্গে সিলেটে অবস্থান, হাসপাতালের সংস্কার কাজের মালামাল নিজ বসতবাড়িতে ব্যবহার এবং হাসপাতালের ডাক্তার ও স্টাফদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপিওসহ সর্বমোট ১৩ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। ইউএইচএফপিও ব্যতীত ৫ চিকিৎসক দ্বারা কোন রকমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল। এর পর এদের সঙ্গে যোগ দেন
আরও ৬ জন চিকিৎসক। কিন্তু এ থেকে ৩ জন চিকিৎসক দ্রুত চলে যাওয়ায় বর্তমানে কমর্রত রয়েছেন ইউএইচএফপিও ব্যতীত মোট ৮ জন চিকিৎসক।
৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি উদ্বোধন হলেও জনবল সংকটের কারণে এখনও চালু হয়নি। ফলে
পুরনো ভবনেই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। হাসপাতালের ৩টি জেনারেটার ১০ বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পরে আছে। দীর্ঘ দশ বছরের বেশি সময় ধরে ডেন্টাল, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, রেডিওগ্রাফার পদগুলো শূন্য রয়েছে ফলে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গত ৪ বছর ধরে এক্স-রে মেশিন ও একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হচ্ছে।
বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আলীনুর মিয়া জানান, হাসপাতালে ভাল কোন অভিজ্ঞ সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই। মহিলাদের জন্য কোন গাইনী ডাক্তার না থাকায় মহিলারা চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এছাড়া দাঁতের ডাক্তার, এক্স-রে, ল্যাব টেকনেশিয়ান না থাকায় বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হয়।
ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে যোগদানের পর তাহিরপুর হাসপাতালের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা অর্থাৎ ইউএইচএফপি’র দায়িত্ব পালন করার কারণে জেলা সিভিল সার্জন, সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা সমন্বয় সভায় যোগদান করতে হয়। ফলে মাসের অন্তত ১০-১২ দিন অফিসে ডিউটি করা সম্ভব হয় না। আর সে কারণেই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী জানান, ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পত্রপত্রিকায় দেখেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএইচ/
আরও পড়ুন