ঠাকুরগাঁওয়ের সড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদ
প্রকাশিত : ১৮:৪১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯
ঠাকুরগাঁওয়ের সড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদ, ৪ বছরে প্রাণহানি শতাধিক
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ঠাকুরগাঁওয়ে সবচেয়ে বড় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বিগত ৫ বছরেও জেলার সড়কে ঘটেনি এমন দুর্ঘটনা। একই স্থানে বাস-নৈশ কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়। আর মাসজুড়েই যেন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে সড়ক। দুর্ঘটনায় নিহত হয় ২১ জন এবং আহত হয় শতাধিক।
ঠাকুরগাঁও ট্রাজেডি:
গত ২ আগস্ট শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোঁচাবাড়ী এলাকায় বলাকা উদ্যানের সামনে দুই বাসের সংঘর্ষে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। ঘটনাস্থলে সাতজন ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে দুইজন ও দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় এখনও প্রায় ৩০ জনের বেশি চিকিৎসাধীন। ঠাকুরগাঁওয়ের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সড়ক দুর্ঘটনা। এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় এক সঙ্গে এত লোক মারা যায়নি।
গত ৪ আগস্ট জেলা শহরের এনামুল পাম্পের সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার দলুয়া গ্রামের মত পাহাড়ীয়ার ছেলে লক্ষী চন্দ্র (২৮) নিহত হন।
গত ১৮ আগস্ট পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল সড়কের নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের একরামুল হকের ছেলে মমিনুল ইসলাম মমিন (২৫) নিহত হন।
গত ২২ আগস্ট ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সড়কের ডেনিশ স্কুলের সামনে দুই বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয় আরও ২০ জন।
গত ২৪ আগস্ট জেলার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর বি-আখড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গাছের সঙ্গে নৈশ কোচের ধাক্কায় কোচ সহকারী ইউসুফ আলী (৪০) নিহত হন। এ ঘটনায় আহতের সংখ্যা ছিল আরও ১০ জন।
গত ২৬ আগস্ট পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল সড়কে ট্রাক্টরের ধাক্কায় বাইসাইকেল চালক আকতারুল ইসলাম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন এবং গত ৩১ আগস্ট ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের সালান্দর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকায় ট্রাকের চাকার নিচে পড়ে মোটরসাইকেল চালক আব্দুস সামাদ (৪৫) নামে কৃষ্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঠাকুরগাঁওয়ের সড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদ, ৪ বছরে প্রাণহানি শতাধিক
ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। হতাহত হচ্ছে বহু মানুষ। আঞ্চলিক সড়ক ও মহাসড়ক যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
মোটর শ্রমিক ও চালকদের অভিযোগ, সড়কে চাঁদাবাজিসহ পুলিশি হয়রানীর কারণে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচল, চালকের বিশ্রামহীন দায়িত্ব পালন ও মহাসড়কে অবৈধ গাড়ি চলাচল করায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।
এসব দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সড়ক বিভাগ বলছে, অদক্ষ চালক, ট্রাফিক আইন না মেনে ওভার স্পিডে গাড়ি চালানো, ফিটনেস বিহীন গাড়ির অবাধ চলাচলসহ বেশ কিছু কারণে ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। আইন সংশোধন ও শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব পুলিশ, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরের ২ আগস্ট ঠাকুরগাঁও-ঢাকা মহাসড়কে খোঁচাবাড়ি নামকস্থানে নৈশ কোচ ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১১ জন যাত্রী প্রাণ হারায়। এছাড়াও ওই মাসেই (আগস্ট) আরও ৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৯ জন। চলতি মাসের সেপ্টেম্বরে নিহত হয় তিন জন। এ নিয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রাণ হারায় মোট ৩৪ জন।
ঠাকুরগাঁও জেলা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে গত চার বছরে প্রাণ হারিয়েছে ৭৭ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালে প্রাণ হারায় ২৮ জন, ২০১৬ সালে ২৪ জন, ১৭ সালে মারা যান ১২ জন ও ১৮-তে ১৩ জন। এর বিপরীতে নিয়মিত মামলা হয়েছে ২৭টি আর ইউডি মামলা হয়েছে ৪৮টি।
এ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে মোট ১১০ জন। ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এনএস/
আরও পড়ুন