ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪

পাবনায় ফের বেড়েছে পেয়াঁজের দাম 

রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে:

প্রকাশিত : ১৯:০২, ৫ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৯:৩২, ৫ জানুয়ারি ২০২০

পাবনায়  মূল কাটা (কন্দ) পেঁয়াজ বাজারে আসলেও দামে আগুন। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুইশত টাকা। পাবনার উৎপাদিত পেঁয়াজ দেশের এক চতুর্থাংশ চাহিদা মেটায়। তাই চাষিরা ঝুঁকেছেন পেঁয়াজ চাষে। তবে সাধারণ মানুষের মাথায় হাত।   

পাবনার বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বিক্রেতা পাইকারি কিনছেন ১৮০-১৮৫টাকা কেজি। মাঝে কিছুটা পেঁয়াজের দাম কমে ছিল ১শ থেকে ১শ ৩০ টাকা। শুক্রবার এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছিল ১৭০ টাকা। রবিবার তিন দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি  দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা কেজি। এখন মাথায় হাত সাধারণ মানুষের।। তবে পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, শীতের মৌসুমে সারা দেশে আকস্মিক বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় হাট-বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। কিন্তু চাহিদা অপরিবর্তিত থাকায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম।

কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেল,মূল পদ্ধতির (মৌসুমী) পেঁয়াজের আবাদ প্রায় শেষের দিকে। তিন সপ্তাহের  মধ্যে বাকি জমির পেঁয়াজের আবাদ শেষ হবে বলে জানা গেছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এই পদ্ধতির পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করবে। তখন দাম আবার কমে আসবে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এখন ভরসা মূল পদ্ধতিতে চাষ হওয়া পেঁয়াজ। 

পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর (খামার বাড়ি)  সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মওসুমে  পাবনা জেলার নয় উপজেলায় ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর ভেতর সুজানগর উপজেলাতেই  ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর। এরপর সাঁথিয়া উপজেলাতে ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টর। বাদ-বাকী  অন্যান্য উপজেলায়। এ আবাদ থেকে প্রায় ৭ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হবে। এখন পর্যন্ত তিন-চতূর্থাংশ আবাদ শেষ। তার ধারণা, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হবে। জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়। তারপর সদরে।

  

পাবনা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজাহার আলী জানান, এবার পেঁয়াজ বীজ এর দাম বেশি ছিল এবং বীজের মানও ভাল ছিল। সুজানগর উপজেলার মানিকহাট, উলাট, বামনদি, চরদুলাই, বনকোলা এলাকায়  এবার পেঁয়াজ বীজে ভাল চারা হয়েছে। বিস্তীর্ন গাজনা বিল এলাকা এবং সাঁথিয়ার ঘুঘুদহ বিল এলাকার গৌরিগ্রাম, বিষ্ণুপুর, ক্ষেতুপাড়া, চরপাড়া, রঘুরামপুর, মাছগ্রামের কৃষকেরা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন।পেঁয়াজের দাম ভালো দেখে জেলার কৃষকেরা এবার পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।মূল পদ্ধতির পেঁয়াজের ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সময় থেকে  পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করবে।’

এদিকে রবিবার টেবুনিয়া হাটে প্রতি কেজি আগাম জাতের পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় (পাইকারি) বিক্রি হতে দেখা গেছে। হাট ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের আমদানি হয়েছে বেশ কম। হাটে আসা পেঁয়াজের সবই স্থানীয় আগাম জাতের বলে জানা যায়।হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা ঈশ্বরদীর আথাইলশিমুল গ্রামের রাব্বি মিয়া হাসিমুখে বললেন,’এবার ভাল ট্যাকা পাইছি।অনেকদিন পর ট্যাহার মুখ দেখলাম’। 

আতাইকুলা হাটে পেঁয়াজের এক আড়তদার বললেন, ’আর দিন বিশের  মধ্যে আগাম জাতের পেঁয়াজ হয়তো শেষ হয়ে যাবে। অনেকের ধারণা ছিল, আগাম জাতের পেঁয়াজ উঠলেই দাম কমে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। তাই এখন ভরসা মূল পদ্ধতিতে চাষ করা পেঁয়াজে। মাস দুইয়ের মধ্যে এই পেঁয়াজ বাজারে উঠলে দাম কমবে বলে আশা করা যায়।’

পেঁয়াজ পরিচর্যায় পাবনার কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। পেঁয়াজের শেকড় পঁচা ও লেদা পোকার কবল থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা নিম তেল ও ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করছেন।

পাবনা অঞ্চলের কৃষক এবার পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন । মূল কাটা(কন্দ) পেঁয়াজ লাগিয়ে  উৎপাদনকারী চাষীরা ইতোমধ্যে ফসলের উচ্চ মূল্য পেয়েছেন। তারা এই  চাষের পেঁয়াজ  ঘরে তোলার সময় ভালো দামের আশায় পেঁয়াজের আমদানি বন্ধের দাবি করেছেন। পাশাপাশি  পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জানিয়েছেন। পেঁয়াজ  আবাদে কৃষকদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করছে স্থানীয় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউট। 

পাবনা  কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজাহার আলী আরো জানান,  খাদ্য মন্ত্রনালয়ের চাহিদা অনুসারে দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টন। এর এক চতুর্থাংশের বেশি পেঁয়াজের যোগান আসে পাবনা জেলা থেকে। এ কারনে  পাবনাতে পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধির উপর  জোর দেয়া হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে পাবনা জেলার নয় উপজেলায় ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ভেতর সুজানগর উপজেলাতেই আবাদ  হবে ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর।এরপর সাঁথিয়া উপজেলাতে ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টর। বাদ-বাকী অন্যান্য উপজেলাতে। এ আবাদ থেকে প্রায় ৭ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপন্ন হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পেঁয়াজের আবাদ ত্বরান্নিত করার জন্য কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক জমিতে পেঁয়াজের চারা লাগানো হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবার আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হবে। তার আশা, এ পেঁয়াজ উৎপাদন হলে দেশের মোট পেঁয়াজের চাহিদার এক চতুর্থাংশের যোগান দিতে পারবে এ জেলা।

জেলার সুজানগর ও সাঁথিয়া  উপজেলায়  গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজ আবাদের জন্য ইতোমধ্যে ছোট ছোট প্লট করে চারা উৎপাদন করেছে কৃষক। মূল কাটা পেঁয়াজ লাগিয়ে আগাম যেসব পেঁয়াজ  আবাদ করা হয়েছিল সেসব  উচ্চমূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন কৃষকরা। মূল কাটা পেঁয়াজে খুশি  সুজানগরের কৃষক ইসহাক আলি (৫৬)। তিনি বলেন, তিনি বাড়ি সংলগ্ন ১৬ শতক জমিতে মূল কাটা পেঁয়াজ  লাগিয়েছিলেন। প্রতি  কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি করেছেন। যেহেতু দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে, তাই আবার চারা পেঁয়াজ  লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই ১৬ শতক জমির পেঁয়াজ তিনি ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার দাবী মৌসুমী পেঁয়াজ চৈত্র-বৈশাখ মাসে ঘরে উঠার সময় যেন বিদেশ হতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়। না হলে পেঁয়াজের ন্যায্য ম‚ল্য পাওয়া যাবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনা  অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা বলেন, সুজানগরের বিল গন্ড হস্তী বা গাজনার বিল জুড়েই আবাদ হয় পেঁয়াজের। বিলে পদ্মা-যমুনার তীরবর্তী বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবেশ করে পলি মাটি পড়ার কারনে জমির উর্বরতা শক্তি বেশি থাকায় সেখানে পেঁয়াজের ফলন আশাতীত হয়ে থাকে। যে কারনে গাজনার বিলে কৃষকেরা রবি মৌসুমে শুধু পেঁয়াজ আবাদ করে থাকে।

সাঁথিয়া  উপজেলার নারিন্দা গ্রামের  অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক দুলাল সরকার (৬২) বলেন, কয় দিনের মধ্যে জমিতে পেঁয়াজ লাগাবো,  মাস তিনেক পর ঘরে তুলতে পারবো।দু:খ করে বললেন, পেঁয়াজ করে লাভ কী। রাখার জন্যে হিমাগার তো নাই। পেঁয়াজ সারা বছর রাখা গেলে অন্য দেশ থেকে তো আর আনতে  হয় না ।পাবনায় সবজি, পেঁয়াজ, রসুন,সিম পর্যাপ্ত হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি  অনুরোধ এগুলো রাখবার জন্যে তিনি যেন একটা হিমাগার করেন।
  
এদিকে পাবনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনষ্টিটিউটের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. ফারূক হোসেন জানান, চলতি রবি মৌসুমে রাজস্ব খাতের আর্থিক সহায়তায় সুজানগর ও আটঘরিয়া উপজেলাতে একশ জন কৃষককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ মালা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পেঁয়াজ আবাদের ঘাঁটি সুজানগরের গাজনার বিলে মাটি পরীক্ষা করে কৃষকদের সার সুপারিশ মালা দেয়া হয়েছে। এর ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বাকী সাতটি উপজেলাতে সরকারী নির্দেশনা ও আর্থিক যোগান না থাকায় পেঁয়াজ আবাদের জন্য সার সুপারিশ মালা দেয়া সম্ভব হয় নি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি