ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দোকানের ৭০ টাকা পাওনা নিয়ে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২২:৪০, ১০ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ০০:০৪, ১১ জানুয়ারি ২০২০

নিহত মো. নুরুল ইসলাম মোড়ল (৫৫)

নিহত মো. নুরুল ইসলাম মোড়ল (৫৫)

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে মুদি দোকানে ৭০ টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে গ্রামের একটি চিহ্নিত চাদাঁবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী চক্র দা ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে মো. নুরুল ইসলাম মোড়লকে (৫৫)। তিনি সৈয়দপুর গ্রামের শুক্কুর মাহমুদ মোড়লের ছেলে। গত ৯ জানুয়ারী সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 
শুক্রবার বিকেলে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাকে দেখতে হাজারো মানুষ জড়ো হন তার বাড়িতে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় স্থানীয় মাঠে তার নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

উল্লেখ্য, সৈয়দপুর গ্রামের মো. আব্দুল মন্নানের ছেলে মো. শিমুল মিয়ার দোকানে ৭০ টাকার পাওনা ছিল নিহত নুরুল ইসলামের। এরই জের ধরে সকালে গ্রামের প্রভাবশালী সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আব্দুস ছত্তারের স্বজন ও আব্দুল মালেক ইয়াবা কারবারী মাদক ব্যবসায়ী গংদের অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত ৬ জানুয়ারী সকাল ৯টায় বিষয়টি সালিশে দেখার কথা বলে নুরুল ইসলামকে ডেকে গ্রামের মধ্যপাড়া প্রাইমারী স্কুলের রাস্তার পাশে নিয়ে এলোপাতাড়ি ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা, ঘাড় ও হাতে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। 

এ সময় নুরুল ইসলামকে রক্ষার্থে আসা পরিবারের আরও ১০ জন আহত হন। তাৎক্ষণিক নুরুল ইসলামসহ তাদেরকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার অবস্থার অবনতি হলে ওইদিনই গুরুতর আহত ৬ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। গত ৯ জানুয়ারী নুরুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

এ ঘটনায় নিহতের স্বজন গাজী আবুল কালাম বাদি হয়ে গত ৭ জানুয়ারী প্রতিপক্ষ হামলাকারী সৈয়দপুর গ্রামের মৃত হাজী একরাম হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল মালেক (৫০), সহোদর নাদির শাহ (৪৫), মৃত মফিজ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৫৫), মো. দুলাল মিয়া (৪২), মো. আব্দুল মালেকের ছেলে গফ্ফার মিয়া (২১), রবি মিয়া (২৬), সোহেল মিয়া (২৮), জুবায়ের (২০), নাদির শাহ’র ছেলে নাজমুল হোসেন (৩০), আব্দুস ছত্তারের ছেলে আলম মিয়া (৩৮), মন্টু মিয়ার ছেলে মণির মিয়া (২২), ছাদিরের ছেলে সামি মিয়া (২২), মৃত হাজী একরাম হোসেনের ছেলে ছাদির মিয়া (৪৫), আব্দুল মালেকের ছেলে লাদেন মিয়া (১৯), মৃত সাজু মিয়ার ছেলে আলীনুর (৩০) -এই ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর গ্রামের আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় চোরকারবারী, মাদক, ইয়াবার ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত থাকায় নিহত নুরুল ইসলাম সব সময়ই এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এরই জেরে দোকানে বাকি থাকা ৭০ টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে সালিশ বৈঠকে বিষয়টি নিস্পত্তির কথা বলে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে তারা। এ সময় আরও ১০ জন গুরুতর আহত হন। 

এর আগে ২০১৮ সালে নিহত নুরুল ইসলামের আপন বড় ভাই মো. সুরুজ আলীকেও ওই সন্ত্রাসী চক্রটি একই জায়গাতে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। 

এ ব্যাপরে নিহতের ভাতিজা গাজী আবুল কালাম জানান, এই সন্ত্রাসী চক্রটি সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস ছত্তারের স্বজন এবং তারা প্রভাবশালী হওয়ায় ২০১৮ সালে আমার পিতা সুরুজ আলীকে ও একই জায়গায় ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। 

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, গত ৬ জানুয়ারী আমার আপন চাচা মোঃ নুরুল ইসলামকেও একইভাবে একই স্থানে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন। কিন্তু কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। ওদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও কিভাবে আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে তা বোধগম্য নয়। তিনি ওই সমস্ত সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি জানান। 

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার ওসি মো. শহীদুর রহমান জানান, মামলা দায়েরের পর পুলিশ এখন পর্যন্ত দুইজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

কেআই/এনএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি