প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরও চালু হয়নি নাসিরনগরের হাঁস খামার
প্রকাশিত : ১৯:২৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২০
চালু না হওয়া নাসিরনগরের হাঁসের খামার
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরও চালু হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারটি। তাই অলস পড়ে আছে নির্মাণ হওয়া অবকাঠামোসহ বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে হাঁসের ডিম ও হাঁসের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সরকারি উদ্দেশ্য।
নাসিরনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কুন্ডা ইউনিয়নের তুল্লাপাড়া গ্রামের সরাইল-নাসিরনগর মহাসড়কের পাশে ৩ একর জমির উপর ‘হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার’ নামে এ খামারটি গড়ে তোলা হয়। যার অবকাঠামো নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। অথচ খামারের উৎপাদন শুরু হয়নি এখনও। নির্মাণ করা স্থাপনাগুলোও অব্যহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। খামারের ভিতর ময়লা আবর্জানা ও ঘাস জমে আছে।
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ জুন। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় চালু করতে পারছেনা খামারটি। আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও খামারের কার্যক্রম চালু নেই। এতে বিপাকে পড়েছেন হাওরবেষ্টিত নাসিরনগর উপজেলার প্রায় দুইশত ছোট-বড় খামারের মালিক। প্রতি মাসে এই খামার থেকে প্রায় ৩০ হাজার হাঁসের বাচ্চা খামারিদের মাঝে সরবরাহ করার ক্ষমতা রয়েছে।
সরেজমিনে নাসিরনগরের হ্যাচারী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এ খামারে রয়েছে বাচ্চা পালনের জন্য আধুনিক মানসম্পন্ন ৬টি শেড। এছাড়াও চারতলা প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন সুবিধা, একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র, জেনারেটর, খামারে বাচ্চা ফোটানোর দুটি অত্যাধুনিক ইনকিউবেটর (ডিমে তা দেওয়ার যন্ত্র), ৬টি লেয়ার শেড, ১টি ব্রুডার শেড, ১টি গ্রোয়ার শেড, ১টি গ্যারেজ, ১টি পাম্প হাউজ, জেনারেটর রুম ও ১টি খাদ্য গুদাম।
এচাড়াও খামরের বেশ কয়েকটি যানবাহন (মোটরসাইকেল, পিক-আপ ও ১টি জীপ) প্রয়োজন। অথচ তার কিছুই নেই এই খামারে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাসিরনগর উপজেলায় নির্মিত ‘হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার’ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের ১ বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও খামারটি চালু হয়নি। যদি খামারটির কার্যক্রম চালু থাকত তাহলে এলাকাবাসী যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হতো, তেমনি উপজেলায় ক্ষুদ্র খামারিরা হাঁস পালনে উদ্বুদ্ধ হতো এবং পূরণ হতো জনগণের আমিষের চাহিদাও। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় খামারের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই এলাকার মানুষ। আর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব থেকে।
কথা হয় হ্যাচারিটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রুবেল তালুকদারের সাথে। তিনি জানান, প্রায় দুই বছর হল এই খামারে কাজ করছি কিন্তু বেতন পাচ্ছিনা। আমার সাথে যারা ছিল বেতন না পাওয়ায় তারা অন্যত্র চলে গেছে।
খামারটির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুমন ভৌমিক জানান, খামারটি চালু করতে বরাদ্দ করা ১৪টি পদে জনবল প্রয়োজন। এর মধ্যে দুটি পদ প্রথম শ্রেণির। বর্তমানে খামারে একজন নৈশ প্রহরী আছেন। বাকী সবগুলো পদ শূন্য। প্রয়োজনী জনবলের অভাবে খামারের কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছেনা এবং বিরাজ করছে স্থবিরতা।
তিনি আরও বলেন, খামারের বেশ কয়েকটি যানবাহন (মোটরসাইকেল, পিক-আপ ও ১টি জীপ) প্রয়োজন। অথচ কিছুই নেই এই খামারে। একজন ঝাড়ুদার দিয়ে কিভাবে চালু হবে এই খামার? এমনই প্রশ্ন রাখেন এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম সাইফুজ্জামান বলেন, খামারটি চালু করতে প্রয়োজনীয় জনবল দরকার। কিন্তু আমরা সে জনবল পাচ্ছি না। ৫ জন অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে খামারটির দেখাশোনার জন্য। তবে খামারটি চালু না হওয়ায় তাদের মধ্যে তিনজন চলে গেছে অন্যত্র। মো. আলমগীর মিয়া প্রেষণে কাজ করছেন সোনাগাজি হাঁসের খামারে, ইসমাইল মিয়া কাজ করছেন ফরিদপুর ডেইরি খামারে, মর্জিনা আক্তার বরিশালের পোল্ট্রি খামারে। দুজনের মধ্যে মো. রুবেল তালুকদার ও কোহিরুন বেগম খামারটির দেখাশোনা করছেন। তারাও বেতন পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে একসাথে ১৪টি ‘হ্যাচারিসহ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার’ ১০ বছরের প্রকল্প চালু হয়। বাকি ১৩টি চালু হলেও এতোসব সমস্যার কারণে নাসিরনগরের খামারটি চালু হয়নি এখনও।
এনএস/
আরও পড়ুন