খেজুরের রস ৩০ টাকা লিটার!
প্রকাশিত : ১৩:১২, ২০ জানুয়ারি ২০২০
দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর বাউফলসহ সব উপজেলায় খেজুরের রস বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা লিটার দরে। কিন্তু গাছ ও গাছি কমে যাওয়ায় যেমন দুষ্প্রাপ্য হয়েছে রস, তেমনি নবান্নের রেশ ধরে আসা শীতের পিঠা পুলির সম্পর্কেও পড়েছে ভাটা।
শীতের সকালে আগের মতো এখন খেজুর গাছে সারি সারি রসের হাঁড়ি দেখা না গেলেও উপকূলীয় এ জেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা বেড়েছে খেজুর রসের।
দীর্ঘদিন থেকে এ পেশার সঙ্গে জড়িত উপজেলার ছোট ডালিমা গ্রামের গাছি খলিলুর রহমান জানান, মাঝারি সাইজের চার হাঁড়ি (২০ লিটার মাপের এক কলসি) খেজুর রস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকায়। এতে প্রতি লিটার রসের দাম পড়ছে প্রায় ৩০ টাকা। চাহিদা থাকায় অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে অর্ডার করতে হচ্ছে সপ্তাহ খানেক আগেই।
তিনি জানান, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা ও ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের কারণে কমে গেছে খেজুর গাছ। নবান্ন ও শীতের পিঠা পুলিতে চাহিদা থাকলেও গাছ কমে যাওয়ায় পেশাদার গাছিরাও উৎসাহ হারিয়েছেন। এতে করে অঞ্চলে দিনে দিনে দুষ্প্রাপ্য হয়েছে খেজুরের রস। চরাঞ্চলসহ উপজেলার সর্বত্র কমে গেছে গাছ ও গাছির সংখ্যা।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত ভিটে-বাড়ি, পুকুর পাড়, খেতের পাশের আলে কিংবা রাস্তার পাশে আর সারি সারি খেজুর গাছের দৃশ্যের দেখা মেলে না। হারিয়ে যাচ্ছে সারি সারি রসের হাঁড়ি। বাড়তি কাজ আর দামে কম পড়ার কারণে নালিগুড় কিংবা পাটালি তৈরীতে হাত না বাড়িয়ে রস বিক্রিতেই গাছিদেরও ঝোঁক বেশি।
শীতের সকালে গাছ থেকে খেজুরের রস নামানো গাছির চেচামেচি আর রোদেলা সকালে খেজুর রসের কিংবা গুড় তৈরীর মৌ-মৌ গন্ধে বয়োবৃদ্ধ ও শিশু-কিশোরদের মুড়ি-মুড়কি নিয়ে মেতে ওঠা আনন্দ উৎসবের অপরূপ দৃশ্য এখন যেন শুধুই স্মৃতি।
পশ্চিম ভরিপাশা গ্রামের গাছি সেলিম মৃধা জানান, রস সংগ্রহে গাছ ও গাছির শঙ্কট দেখা দিয়েছে। ছোটডালিমা গ্রামের সেকান্দার মৃধা, বাদশা, বড় ডালিমার মন্নান হাওলাদার, বারেক সিপাই, বেল্লাল হাওলাদার, আবুবকর, ওয়াজেদ হাওলাদার, ইদ্রিস গোলদার, ধানদীর নাসীর উদ্দিন, পূর্ব-ভরিপাশার শাহআলম হাওলাদার, পশ্চিম ভরিপাশার ওহাব মৃধা, মেহেন্দিপুরের শাহজাহান গাজী, বীরপাশার হাবিবুরের মতো পেশাদার গাছিরা এখন আর খেজুর গাছের রস বের করে গুড় তৈরীর মতো কাজের সঙ্গে আর জড়িত নেই।
অগ্রাহায়ন, পৌষ ও মাঘ মাসে কুয়াশাভরা হিম হিম শীতে খেজুর রসের ক্ষীর, সিরনি, পিঠে-পায়েশ গ্রামীন আনন্দ উৎসব পেত এক ভিন্ন মাত্রা। আনন্দ উৎসবের ওইসব দিনগুলো এখন শুধুই অতীত।
‘সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’নামে স্থানীয় প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সংগঠনের পরিচালক মন্ডলীর সদস্য শামসুন নাহার বলেন, ‘বিদেশেও রয়েছে খেজুরের রসের চাহিদা। বেকলমাত্র ঐতিহ্য ধরে রাখাই নয়, এ সময়ে মধু বৃক্ষ খেজুরের রসের স্বাদ আর মৌ-মৌ ঘ্রাণে মৌমাছি, পাখিরাও যেন প্রাণ ফিরে পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে মৌমাছি ও বিপন্ন পাখিসহ পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশবান্ধব দেশি খেজুর গাছ রোপনে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।’
এআই/
আরও পড়ুন