মৌলভীবাজারে লোকালয়ে এক ডজন হনুমান, রক্ষায় এগিয়ে এলো র্যাব
প্রকাশিত : ১০:৪৫, ২২ জানুয়ারি ২০২০
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার লোকালয়ে হঠাৎ করে প্রায় ডজন খানেক হনুমানের উপস্থিতিতে আক্রমনের শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসী। এ অবস্থায় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে র্যাব-৯।
গ্রামের গাছের ফলমূল, শাকসবজি খেয়ে ফেলাসহ মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে (উঠানে) খাবার নিয়ে যাওয়া, দলবেধে পায়চারী, কারণে-অকারণে ছুটোছুটি ইত্যাদি কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এ অবস্থায় হনুমান তাড়াতে লাঠিসোটা ও গুলতি ইত্যাদি নিয়ে বের হয় গ্রামবাসীকে।
জানা যায়, হঠাৎ করে সংঘবদ্ধ হনুমানের দলের উপস্থিতি গ্রামবাসীকে আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলেছে এবং মানুষের হাতে এদের জীবন বিপন্ন হবারও আশংকা রয়েছে। বন্যপ্রানীর এমন উপস্থিতিতে অনেকটাই উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কগ্রস্থ।
সরেজমিনে মঙ্গলবার বিকেলে ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘন গাছগাছালি ঘেরা এ গ্রামে কয়েকটি হনুমান একগাছ থেকে অন্যগাছে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কোনটি তেঁতুল গাছে বসে তেঁতুল খাচ্ছে। সবজী খেতে শিম খেয়ে সাবাড় করছে। গ্রামবাসী বার বার তাদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু মানুষের তাড়া খুব একটা আমলে নিচ্ছে না হনুমানের দল। গ্রামের পাশ দিয়েই গেছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের তার, যেগুলোতে যেকোন সময় বিদ্যুতায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে এদের।
র্যাব-৯ এর অপারেশন অফিসার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম জানান, বন থেকে গ্রামে প্রবেশ করা এ হনুমান দলের সহজাত চলাচল ও জীবনাচরণের কারণে গ্রামের মানুষ উপদ্রব মনে করে এদের উপস্থিতি পছন্দ করছে না। তারা তাদের ঢিল ছুড়ে মারছে। এমন সংবাদ পেয়ে এই হনুমানদের রক্ষায় পদক্ষেপ নেন তারা।
র্যাব-৯ এর শ্রীমঙ্গল র্যাব ক্যাম্পের স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, র্যাব-৯ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর শওকাতুল মোনায়েমের নির্দেশে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি টিম নিয়ে গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা ও ভয় লক্ষ্য করেন। এ সময় অতি উৎসাহী কিছু মানুষ হনুমানদের উপর চড়াও হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তিনি স্থানীয় মসজিদের মাইকে ‘গ্রামবাসীকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান’ করতে বলেন এবং মসজিদ থেকে গ্রামবাসীকে হনুমানদের বিরক্ত না করার আহ্বান করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রামবাসীকে একত্রে জড়ো করে বিপন্ন প্রায় এ প্রাণীটির অস্তিত্ব রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বন্যপ্রাণীর প্রতি মানুষকে সহানুভূতিশীল হওয়ার অনুরোধ করেন।
গ্রামের বাসিন্দা আল ইব্রাহীম বলেন, ২/৩দিন ধরে ৮/১০টি হনুমান এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা ক্ষুধা নিবৃত্তে মানুষের খেতের সবজি, গাছের ফলমূল খেয়ে ফেলছে।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, এসব হনুমানের দলের বন্যপ্রাণীসুলভ প্রকৃতিগত অবাধ বিচরণ মানুষের জীবনযাপনকে অতিষ্ট করে তুলছে, অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে বেশি উৎকণ্ঠিত গ্রামবাসী। বিশেষ করে ভয়ে শিশুদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। তবে তারা গ্রামের মানুষদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
র্যাব-৯ এর অপারেশন অফিসার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম আরও বলেন, বন্যপ্রাণীগুলোর জীবন বিপন্ন এমন সংবাদ জানতে পেরে র্যাবের পক্ষ থেকে তাদেরকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য নিয়াজ ইকবাল মাসুদকে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে লোকালয়ে ছুটে যাওয়া বন্যপ্রাণীদের যাতে কোন প্রকার ক্ষতিসাধিত না হয় সে ব্যাপারে তৎপর ও নজর রাখার অনুরোধ করা হয়েছে। অপরাধ নির্মূলের পাশাপাশি বন, পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় র্যাবের এমন তৎপরতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ বণ্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, ‘আমরা লইয়ারকুল এলাকায় গিয়ে দেখে এসেছি। এলাকাটিতে প্রচুর গাছ ও বাঁশ ঝাড় রয়েছে। হনুমানগুলো গাছের মগডালে থাকায় তাদের ধরা যায়নি। এমনিতে হনুমান মানুষকে আক্রমণ করে না। তবে এই এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইনে প্রানীগুলো বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ফলজ ও বনজ গাছের অপ্রতুলতায় খাদ্যসংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণে বন্যপ্রাণীগুলো খাদ্যের অন্বেষণে লোকালয়ে আসতে পারে।
তিনি জানান, সাতছড়ি থেকে কালেঙ্গা হয়েও হনুমান গুলো এখানে আসতে পারে। বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল ও এদের সুরক্ষা দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোনায়েম লাউয়াছড়া থেকে বেরিয়ে আসার কথা নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘হনুমানের আগমনের ব্যাপারটি আমরা জেনেছি। লাউয়াছড়া বনের হনুমান এক সাথে ৩/৪টি করে ঘুরে বেড়ায়। ৮/১০টি এক সাথে ঘুরে বেড়ানোর রেকর্ড নেই। খুব সম্ভবত মধুপুর অঞ্চল থেকে কলার গাড়িতে করেও আসতে পারে এ হনুমানের দল।’
তবে আজ বুধবার তারা সরজমিন পরিদর্শন করে ভালো করে দেখবেন এ গুলো লাউয়াছড়া বনের হনুমান কিনা।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি এখনও জানেন না। তবে এখনই খোঁজ নিচ্ছেন। লাউয়াছড়া থেকে যদি হনুমান বের হয়ে থাকে তবে ৩/৪ দিনের মধ্যে ফিরে আসবে। তবে লোকালয়ে থাকাকালীন সময়ে কেউ যেন প্রাণী গুলোকে বিরক্ত না করে সে বিষয়ে তারা ব্যবস্থা নিবেন।
আরও পড়ুন