ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও পরামর্শ শুনতে স্কুলে ‘ইউএনও’ বক্স

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:১৭, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা জানতে ও সমাধান করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ‘ইউএনও (UNO)' বক্স বসানো শুরু করেছেন। 

এই বক্সে শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারবেন। আর এটি খুলে সকল অভিযোগ কিংবা পরামর্শ সরাসরি দেখবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেই। উপজেলার দুটি স্কুলে এটি পরিক্ষামূলকভাবে দেয়া হলেও সচেতন মহল বিষয়টিকে খুবই ভালভাবে দেখছেন। 

শিক্ষার্থীরা মনে করেন এই বক্সে অভিযোগ দিলে দ্রুত কাজ হবে। পরিবার ও শিক্ষকদের বলতে না পারা বিভিন্ন সমস্যাগুলো তারা অনায়াসে এই বক্সে লিখে দিতে পারবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খিদের বিভিন্ন পরামর্শও এখানে দেয়া যাবে।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফেনির মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত হত্যার মূলে ছিল ইভটিজিং। ভাল রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন হয়রানি ও প্রশ্নফাঁসের মত অপরাধ। তাছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লাশ প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র‌্যাগিং এসব সমস্যা সংক্রান্ত তথ্যগুলো সঠিক সময়ে প্রশাসনের কাছে পৌছায় না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পরিবারের ভয়ে কিংবা শিক্ষকদের সাথে খোলা মেলা কথা বলতে না পারার কারণে অনেক সময় চুপ করে থাকেন। 

এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে বিরুপ প্রভাব পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঠ ও স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি করে‘ইউএনও (UNO)' স্থাপন করে তালাবদ্ধ করে রাখার চিন্তা করেন। এর চাবি ইউএনও অথাবা তার কোনো প্রতিনিধির কাছে থাকবে। এই বক্সটি সপ্তাহের একটি দিন খোলা হবে। বক্সে কোনো অভিযোগ থাকলে তা সাথে সাথে সংগ্রহ করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তবে এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা অন্য কেউ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এসব বক্স শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অনেকেই। 

প্রাথমিকভাবে উপজেলার রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে দুটি বক্স বসানো হয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বক্স স্থাপনকে শিক্ষার্থীরা ভালভাবেই দেখছেন। তারা মনে করেন পরিবার কিংবা শিক্ষদের সাথে বলতে না পারা অনেক সমস্যার কথাই তারা এই বক্সে লিখতে পারবে। 

এছাড়া ইভজিটিং, বখাটের উৎপাতসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে বলে মনে করছেন তারা। পাশাপাশি অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খিদের বিভিন্ন পরামর্শও গ্রহণ করা হবে। 

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সায়েদা খানম বুষরা জানান, “অনেক সময় রাস্তায় আমাদের সাথে অনেক অশোভন আচরণ হয় যা আমরা পরিবার ও শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করতে পারি না। এই বক্সটি হওয়াতে আমরা খুশি, কেননা এখন থেকে কোনো সমস্যা হলে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বলতে পারব। তবে সব ধরনের গোপনীয়তা যেন রক্ষা করা হয়। এমন উদ্যোগের জন্য আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে ধন্যবাদ জানাই।” 

নবম শ্রেণির ছাত্রী নূরে জান্নাত তোষা জানান, “এটি খুবই ভাল উদ্যোগ। রাস্থাঘাটে কোনো ধরনের ডিস্টার্ব ফিল করলে এখানে জানানো যাবে। গার্লস স্কুলের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয়। এটির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও ইভটিজিং কমে আসবে বলে আমি মনে করি।”

অভিভাবক মো. সাইদুর মিয়া জানান, “এই বক্সটি হওয়াতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি। কারণ যেকোনো সমস্যা আমরা সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে জানাতে পারব। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটি দেয়া হোক।” 

রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল আযাদ জানান, “এই বক্সটি ইভটিজারদের জন্য হুমকি। শিক্ষার্থীদের মাঝে আস্থার জায়গা তৈরি হবে। বাল্যবিবাহ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ হবে। আমার মনে হয় প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে এই ‘ইউএনও (UNO)' বসানো খুবই প্রয়োজন। কেননা এই বক্সটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদারকি করবেন।”

এই বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার জানান, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে প্রশাসনের যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এই ‘ইউএনও (UNO)' বক্স কাজে আসবে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিকে মনিটরিং করার কারণে সকলের আস্থা তৈরি হবে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্লাস প্রমোশন, সেকশন পরিচালনা, অতিরিক্তি শিক্ষার্থী ভর্তি, বাড়তি ফি আদায়, আর্থিক অনিয়ম, বুলিং, র‌্যাগিং এসব সমস্যা কমে আসবে। প্রাথমিকভাবে এই বক্সটি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যেকোন পরামর্শও দেয়া যাবে এই বক্সে।

এআই/এসি
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি