ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

নেত্রকোনায় মেঘালয় থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ে ফিরছেন শ্রমিকরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১৫:১৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোনা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এ জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। রোগটি ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে বহণ করে আনছে স্থানীয় কিছু শ্রমিক।

জানা গেছে, কাজের খোঁজে নিয়মিত এ অঞ্চলের মানুষ ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যাতায়াত করেন। যেসব শ্রমিক জীবিকার তাগিদে প্রতিবেশী দেশের পাহাড়ি ওই রাজ্যে গিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন, তাদের একটি বড় অংশই ফেরেন ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিয়ে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোর মধ্যে নেত্রকোনা জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ওই অঞ্চলের মোট রোগীদের অর্ধেকের সমান।

ব্র্যাকের দেয়া তথ্যমতে, নেত্রকোনা জেলার ৭ শতাংশ মানুষ ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে থাকে। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের ফলাফল বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, ভারতের মেঘালয় থেকে ফিরে আসা মানুষদের মধ্যে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ৬০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল, যাদের ৯৩ শতাংশ পেশায় শ্রমিক। মূলত ভারতের মেঘালয়ের বিভিন্ন কয়লা ও পাথর খনিতে কাজ করতে গিয়ে সেখানে এক থেকে দুই বা ততোধিক সপ্তাহ ধরে অবস্থানকালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন তারা।

জেলাটির ম্যালেরিয়া রোগীদের সবাই যে মেঘালয় থেকে আক্রান্ত হয়ে দেশে এসেছেন তা নয়। স্থানীয় দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা উপজেলার পাহাড়ি জনপদের মশার কামড়েও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। আক্রান্তদের মধ্যে শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষক, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

পর্যবেক্ষণকালের হিসেবে ব্র্যাকের বিশ্লেষণ করা তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে নেত্রকোনায় মোট ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৪ জন, যার মধ্যে ৬০ শতাংশই ভারতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। পরের বছর ২০১৪ সালে মোট ১৮২ রোগীর মধ্যে ১৪৯ জনই ভারতে গিয়ে আক্রান্ত হন। ২০১৫ সালে রোগীর সংখ্যা নেমে ১৩৯ জন হলেও ওই বছর আক্রান্তদের ৮৭ শতাংশই ছিলেন ভারত ফেরত। এরপর ২০১৬, ২০১৭ ও ১০১৮ সালে ভারত থেকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর হার ছিল যথাক্রমে ৯১, ৭১ ও ৯৫ শতাংশ।

এ বিষয়ে নেত্রকোনায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ে ব্র্যাকের পর্যবেক্ষণকাজে নেতৃত্ব দেওয়া সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শামসুন নাহার বলেন, ‘এলাকাটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় ওখানকার লোকজনের, বিশেষ করে শ্রমিকদের মেঘালয়ে যাওয়া-আসা থেকে রোগটির সংক্রমণ হয়ে থাকে। আমাদের বিশ্লেষণে সেটাই ধরা পড়েছে। মূলত কয়লা বা পাথর খনিতে শ্রমিক হিসেবে যাওয়ার পর মেঘালয়ের পাহাড়ি মশার কামড় থেকে তারা সংক্রমিত হয়ে থাকেন, যেটা পরবর্তী সময়ে দেশে আসার পর ছড়িয়ে পড়ে।’

তবে ম্যালেরিয়া নিয়ে আপাতত কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনার সিভিল সার্জন ডা. মো. তাজুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কিছুটা বেশি ছিল। মেঘালয় থেকে শ্রমিকরা এ রোগ নিয়ে ফিরতেন। এখন কয়লা ও পাথরের ব্যবসা সেভাবে না থাকায় শ্রমিকদের যাতায়াত কমেছে। রোগীর সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। কিছুদিন আগে একজন রোগী মারা গেলেও বড় আকারে এটা ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি