ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কুড়িগ্রামে পুলিশের হাতে গাজাসহ আটক আসামীর মৃত্যু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নে পুলিশের হাতে গাজাসহ আটক মোজাফফর (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিহত যুবক উপজেলার উত্তর ছাটগোপালপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের পুত্র। ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি অস্বাভাবিক মৃত্যু এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন।

নিহত মোজাফফর ব্যাটারীচালিত অটো চালাতো। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে অটোচালকরা সমবেত হয়ে দুপুর দুইটার দিকে ঢলডাঙ্গা এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে।

এসময় অটোচালক আমজাদের পূত্র ইউসুফ ও নিহতের বড় ভাই আব্দুর রউফ দাবী করেন পুলিশের অবহেলায় মোজাফফরকে জীবন দিতে হল। মোজাফফর শ্বাসকষ্টসহ যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। শুধু তাই নয় থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে মাত্র ১৫ মিনিট প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার থানায় নিয়ে আসা হয়। দ্বিতীয় দফায় থানায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত সাড়ে ১২টায় আবারো ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক মোজাফফরকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলেও পুলিশ ভোররাত সাড়ে ৪ টায় কুড়িগ্রাম হসপিটালে ভর্তি করায়। তারা এ ঘটনার বিচার দাবী করেন।
 
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, তিনি ঘটনাটি জেনেছেন। নিহতের ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় পুলিশের কোন দায়বদ্ধতা আছে কিনা তা তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহত মোজাফফরের শ্বশুর ইছব আলী ও শ্যালক সোহেল রানা সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জানান, আমরা রাতে তার আটকের খবর শুনি। পরে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে দেখতে এসেছি। কিভাবে কি ঘটেছে তা আমাদের জানা নেই।
 
ভূরুঙ্গামারী থানার এসআই আউয়াল জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রোববার সন্ধ্যায় আমিসহ একদল টহল পুলিশ উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের ঢলডাঙ্গা ঝালবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। এসময় পুলিশ সন্দেহজনক একটি অটোরিক্সা থামাতে বললে রিক্সার ভিতর থেকে একজন যাত্রী ছুটে পালিয়ে যায়। পরে অটোরিক্সাচালক মোজাফফরকে আটক করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যমতে সিটের নীচে সাড়ে ৩ কেজি গাজাসহ তাকে রাত ৮টার দিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় আসার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাত সাড়ে তিনটের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
 
ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ রাত সাড়ে ১১টায় মোজাফফর নামে এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে মারাত্মক শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিল। এছাড়াও যক্ষ্মাসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পনের মিনিট পরেই পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১২টায় আবারো গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য পরামর্শ দেই। 

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রেদওয়ান ফেরদৌস সজীব জানান, তাকে মৃত. অবস্থায় রাত সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে নিয়ে আসে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ।

এ ব্যাপারে ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবির জানান, আটককৃত যুবক এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী এবং মাদক পাচারকারী। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে সে শ্বাসকষ্ট ও যক্ষ্মারোগে ভূগছিল। আটকের পর থেকে সে অসুস্থতা রোধ করছিলেন। আমরা তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছি। এ ব্যাপারে পুলিশের কোন অবহেলা বা গাফিলতি ছিল না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মেনহাজুল আলম জানান, তিনি সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় নিহতের পরিবার, আত্মীয় স্বজন, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সাথে কথা বলেছেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে সবাই নিশ্চিত করছেন নিহত মোজাফ্ফর যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্টসহ নানারোগে আক্রান্ত ছিল।

কেআই/আরকে
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি