গাইবান্ধা-৩ উপনির্বাচন
নৌকায় এগিয়ে মাহমুদুল, বিএনপি-জাপা’য় একক প্রার্থী
প্রকাশিত : ২২:২৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০
গাইবান্ধা-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে এক ডজনেরও বেশি প্রার্থী নৌকার মাঝি হতে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি-সাদুল্ল্যাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ আসনের ৮ লক্ষাধিক ভোটারের এই আসনে মনোনয়ন পেতে বিএনপি-জাপা-জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলেরও প্রায় অর্ধডজন নেতা সক্রিয় রয়েছেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার মারা গেলে নির্বাচন কমিশন এই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। ঢাকা-১০ ও বাগেরহাট-৪ সংসদীয় আসনসহ গাইবান্ধা-৩ আসনে মার্চের ২১ তারিখে উপ-নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে গত ৬ জানুয়ারী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।
তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তদবির শুরু করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এক ডজনেরও বেশি নেতা। প্রার্থীরা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। রাত-দিন একাকার করে দৌঁড়ঝাপ করছেন। পাশাপাশি নিজের ও দলের অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন, তাদের পোস্টার-ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা। একইভাবে তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ নিজ প্রার্থীর সরব রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকারের ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বক্কর প্রধান, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, সাদুল্ল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহারিয়ার খান বিপ্লব, আজিজুর রহমান বিএসসি, মেজর (অব.) মফিজুল ইসলামসহ এই পর্যন্ত ১৩ জন আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এবং জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপা’র(এরশাদ) মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী সক্রিয় থাকলেও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ডা. মঈনুল হোসাইন সাদিক এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী সংশ্লিষ্ট দল ও জোটের মনোনয়ন যে পাচ্ছেন তা একপ্রকার নিশ্চিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বেশ ক’টি সূত্র জানিয়েছেন, গাইবান্ধা-৩ উপনির্বাচনে এক ডজনেরও বেশী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নিয়ে আলোচনা চলছে।
সূত্র আরও বলেন, সংকটকালে প্রার্থীর ভূমিকা, এলাকার জনগণ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ, দলীয় সিদ্ধান্ত ও ভাবধারার প্রতি প্রার্থীর আনুগত্য এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ-এ ধরণের অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়ন ঠিক করেন। সেক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। কিন্তু মাত্র ক’মাস আগে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়াটা এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির মনোনয়ন প্রাপ্তিতে বাঁধা হতে পারে। এছাড়াও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানদেরেকে দলীয় প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দলের কড়া মনোভাব থাকায় মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হকের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির পথ অনেকটা নিশ্চিত করেছে। তাছাড়াও, ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরও দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তে জোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে মনোনয়ন ছেড়ে দেয়া, ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ ইত্যাদি মাপকাঠিও তার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মনোনয়নের বিষয়ে সকল সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর। চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচনের জন্য আগামী ১৪ তারিখের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও সূত্র জানান।
কেআই/আরকে
আরও পড়ুন